আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক শাসন জারির প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হান ডং-হুন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ইওল দেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দল পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) প্রধান হান ডং-হুন আরও জানিয়েছেন, আগামীকাল শনিবার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনপ্রণেতা সমর্থন জানাতে প্রস্তুত রয়েছেন।
তবে গত বৃহস্পতিবার হান যে কথা বলেছিলেন, তা থেকে সরে এসে এখন পুরোপুরি উল্টো কথা বলছেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, অভিশংসন প্রস্তাব আটকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া তার দলের আরেকজন নেতাও বলেছিলেন, শনিবারের ভোটাভুটিতে ইওলের পক্ষ নিতে পিপিপির ১০৮ জন সদস্য প্রস্তুত রয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে সামরিক শাসন জারির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ইওল যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাতে তার কোনো ভুল ছিল না, এমন মন্তব্যের পরপরই হান ডং-হুন আজ শুক্রবার তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। হান এ বিষয়ে আরও বলেন, ‘নতুন করে তৈরি হওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বিশ্বাস করি প্রেসিডেন্ট ইওলকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ও এর জনগণের ভালোর জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
হান ডং-হুন জানান, যেসব সামরিক কর্মকর্তা অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। হান বলেন, ‘সামরিক শাসন জারির সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল না, তা প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেননি। আর এ কারণে যদি তিনি ক্ষমতায় থেকে যান, তবে এ ধরনের আরও সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন, এমন ঝুঁকি থেকে যায়, যা পুরো দেশের নাগরিকদের বিপদে ফেলতে পারে।’
গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল দক্ষিণ কোরিয়ায় বেসামরিক শাসন স্থগিত করে দেশজুড়ে সৈন্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন। পরে পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতাদের ভোটে সামরিক আইন জারির নির্দেশ বাতিল করে দেওয়া হয়। এর ফলে প্রেসিডেন্ট জনগণের প্রতিবাদের মুখে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
এসব ঘটনায় ওয়াশিংটনসহ দক্ষিণ কোরিয়ার মিত্ররা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, পার্লামেন্টে বিরোধী দল প্রেসিডেন্ট ইওলের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করে। আগামীকাল শনিবার কোরিয়ার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় এ বিষয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ৩০০ সদস্যের পার্লামেন্ট বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তবে অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন পেতে এখন ক্ষমতাসীন পিপিপির কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধাচরণ প্রয়োজন। এ বিষয়ে রিয়েলটাইম পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশ লোক অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবারও দেশটির রাজধানী সিউলের প্রাণকেন্দ্রে এবং পার্লামেন্ট ভাবনের কাছে হাজারো জনতা অবস্থান করে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের পদত্যাগ দাবি করে।
যদি অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়ে যায়, তবে সাংবিধানিক আদালতের রায়ের জন্য তা অপেক্ষমান থাকবে। এরপর যদি বিচারকরা তাতে সম্মতি দেন, তখন ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে অভিশংসন কার্যকর হবে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সময় জার্নাল/এলআর