নিজস্ব প্রতিবেদক:
শীতকালীন সবজি ছাড়া বাজারে সব কিছুরই দাম রীতিমতো আকাশচুম্বি। ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বেড়েছে মূল্যস্ফীতিও। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লেও সেভাবে বাড়ছে না আয়; ফলে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এদিকে বরাবরের মতো এবারো রমজানের পাঁচ পণ্যের ওপর নজর পড়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের।
কয়েক বছর ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে- অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজান শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ প্রভৃতি পণ্যের দাম বাড়ানো শুরু করে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে অতীতে কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তাতে কোনো সুফল মেলেনি। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে বাজার তদারকি জোরদার করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, গত ৩১ অক্টোবর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। আসছে রমজান মাসে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ঘাটতি যেন না হয় সেজন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজান আসতে আরো প্রায় তিন মাসের মতো বাকি। এর মধ্যে বাজারে রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পাঁচ পণ্য- চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের উত্তাপ বাড়ছে। রমজানের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে সরকার সন্তোষ প্রকাশ করলেও আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। বরাবরের মতো এবারো অসাধু ব্যবসায়ীদের অপকর্মে অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে বাজার। দুশ্চিন্তা বাড়ছে সাধারণ মানুষের।
রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন ১১টি নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ঋণপত্র খোলায় শিথিলতা দেখিয়েছে। পণ্যগুলো হচ্ছে- চাল, গম, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা এবং খেজুর। এসব পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে নগদ মার্জিন রাখতে হবে। এ নির্দেশনা আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে। আমদানিকারকরা বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক থাকার কথা জানালেও ভরসা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট
রোজা শুরুর তিন মাস আগেই কোম্পানিগুলো মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এ কারণে বাড়তি দামেও চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা। বাজার থেকে একরকম উধাও হয়ে গেছে প্রয়োজনীয় এ পণ্যটি। মাসের ব্যবধানে লিটারে ২০ টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন তেল খুচরা বাজারে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাপটে বাড়ছে ছোলার দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে পণ্যটি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের আরেক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রোজার তিন মাস আগেই গত বছরের তুলনায় ছোলার দাম ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে।
চিনির মূল্যে তিক্ততা
খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকার প্রতি কেজি চিনিতে কমবেশি ১১ টাকা শুল্ক-কর কমিয়েছে। তাতে এখন চিনির দাম কমে প্রতি কেজি ১০০-১১৫ টাকা হওয়ার কথা ছিল।
ভরা মৌসুমেও বাড়তি পেঁয়াজের দাম
মৌসুমের শেষ দিকে এসে আবার বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১৪০ টাকা দরে। অপরদিকে গত সপ্তাহে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ছোট ও বড় আলাদা করে প্রতি কেজি যথাক্রমে ১২০ ও ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা করে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০-১০০ কেজিতে বিক্রি হলেও তা গতকাল ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
নেই স্বস্তি খেজুরেও
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে রমজানের বেশ আগেই শুল্ককর ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। পাশাপাশি রোজার ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ এই পণ্যটির অগ্রিম কর পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়েছে। এতে খুচরা বাজারে খেজুরের দাম কমবে বলে মনে করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে বর্তমানে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরের দাম ৪৮০ থেকে শুরু করে এক হাজার ৭০০ টাকা।
তানহা আজমী