আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সময়টা তখন ২০১১। দক্ষিণ সিরিয়ার দারার একটি রাস্তায় গ্রাফিতি এঁকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় ১৪ বছর বয়সি এক কিশোর। আর তার এই গ্রাফিতিই বদলে দেয় সিরিয়ার ভাগ্য।
১৪ বছর বয়সি মৌয়াবিয়া সায়সনেহ দারার ওই রাস্তায় স্প্রে পেইন্টে লেখে, ‘এজাক এল দরজা, ইয়া ডাক্তার’ যার অর্থ ‘এবার আপনার পালা ডাক্তার’। গ্রাফিতিটিতে ডাক্তার বলে নির্দেশ করা হয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে।
২০১১ সালের মার্চে দক্ষিণ সিরিয়ার দারার রাস্তায় এক কিশোরের গ্রাফিতি লেখার মাধ্যমে শুরু হয় সিরিয়ার ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ। ওই ১৪ বছর বয়সি কিশোর মৌয়াবিয়া সায়সনেহ, সিরিয়ার স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উদ্দেশ্য করে একটি গ্রাফিতি লেখে, যার অর্থ ছিল, এবার আপনার পালা ডাক্তার। এখানে ‘ডাক্তার’ শব্দটি আসাদকে বোঝানো হয়েছিল, যিনি দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চক্ষুবিদ্যা পড়াশোনা করেছিলেন এবং চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন।
মৌয়াবিয়ার এই প্রতিবাদী গ্রাফিতি দ্রুতই সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আগুন লেগে যায়। কিশোরটি এবং তার বন্ধুরা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়। তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়, যা একপর্যায়ে সিরিয়া জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভে রূপ নেয়। দারার স্থানীয় বাসিন্দারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে থাকলে, আসাদ সরকার প্রতিক্রিয়া দেখায় নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে, যাদের গুলির মুখে পড়তে হয় প্রতিবাদকারীদের।
এভাবে, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরিয়ায় আরব বসন্তের অনুপ্রেরণায় বিক্ষোভের আগুন জ্বলতে শুরু করে, যা দ্রুত সিরিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। আসাদ সরকারের বাহিনী শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর অত্যাচার ও গুলি চালাতে থাকে। এরপর থেকেই বিদ্রোহীরা অস্ত্র তুলে নেয়, এবং সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। জুলাই ২০১১ সালে, আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে গঠিত হয় ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (এফএসএ), তবে এই সংগঠন প্রয়োজনীয় ঐক্য ও সংহতি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। এ সময় থেকেই সিরিয়ায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ, যেমন জাবহাত আল-নুসরা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস), তাদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
এভাবে, ২০১১ থেকে শুরু হয়ে ১৫ বছরের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর, সিরিয়া আজ এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে পড়েছে। আজ পর্যন্ত, পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, এবং ১৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের এই দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে, ২০২৪ সালের নভেম্বরের শেষে, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম অপ্রতিরোধ্য গতিতে সিরিয়ার শহরগুলো দখল করতে থাকে। ২৭ নভেম্বর আলেপ্পোতে প্রবেশ করার পর, তারা একের পর এক শহর দখল করতে শুরু করে। অবশেষে, ৮ ডিসেম্বর, বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করতে শুরু করে এবং বাশার আল-আসাদ রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যান।
এখন, ২৪ বছরের শাসনের পর, বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটেছে এবং সিরিয়া নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে।
তানহা আজমী