বুধবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি :
জিডি তুলে নিতে বাদিকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ( রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমদ। শনিবার ( ১৪ ডিসেম্বর) হুমকির প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী হলেন একই বিভাগের উপ- রেজিস্ট্রার মো. রেজাউল করিম হাওলাদার । গত ২৩ অক্টোবর মতিহার থানায় ওই অধ্যাপক এর বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ওই কর্মকর্তা।
রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত আবেদনে তিনি জানান, বিভাগের সদ্য-সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মুসতাক আহমেদ স্যার ইতিপূর্বে আমাকে দুইবার হুমকি প্রদান করেছেন। প্রথমবার ৬ মে ২০২৪ তারিখ সকালে তিনি বিভাগের অফিসে এসে সহকর্মীদের সামনেই আমাকে 'জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি' দেন। গতকাল ১৪ ডিসেম্বর ধরমপুর জাহাজঘাট এলাকায় বাঁধের ধারে আমাকে ডাকা হয়। সেখানে গেলে দুজন ব্যক্তি নিজেদের মানিক ও র্যাপিড নামে পরিচয় দিয়ে মুসতাক স্যারের সাথে আমার কী সমস্যা তা জানতে চান। এসময় তারা আমাকে বলেন তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন আমি বিএনপি করি, তারাও নাকি বিএনপি করেন। তাই তারা আমাকে জিডি তুলে নিতে বলেন।
এসময় তিনি আরো জানান, মুসতাক স্যার সভাপতি থাকার সময় ৯ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা বিভাগ থেকে প্ল্যানিং কমিটি বা একাডেমিক কমিটি কাউকে না জানিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে উত্তোলন করেন। ৪ মে তার সভাপতিত্বের মেয়াদ শেষ হবার প্রাক্কালেও তিনি উক্ত অর্থ ফেরত না দিয়ে এর প্রমাণ লোপাট করার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করেন। আমি তাতে কোনোভাবেই রাজি না হয়ে অফিস থেকে অর্জিত ছুটি নিয়ে চলে যাই। তিনি আমার মাধ্যমে সেই টাকা সমন্বয় করাতে না পেরে এবং বিষয়টি বিভাগের সকল শিক্ষক ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জেনে যাওয়ায় তিনি আমার ওপর অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন। এসব বিষয় মানিক ও র্যাপিড পরিচয়দানকারী দুই ব্যক্তিকে বিস্তারিত বলার পরেও তারা আমাকে পরদিনের মধ্যেই থানা থেকে জিডি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং হত্যার হুমকি দেন। এসময় তারা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জিডি তুলে নিতে বলেন ।
হত্যার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল হাওলাদার বলেন, কাজলার ২ জন বাসিন্দা এসে আমাকে বলছিল জিডি তুলে নিতে। পরবর্তী জিডি না তুললে তারা আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। তার প্রেক্ষিত জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আমি রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছি। আমি আপাতত আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি না।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক মোস্তাক আহমেদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে উপ উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন বলেন, এ সংক্রান্ত একটা চিঠি পেয়েছি। তবে এখনো ফরমালি বসা হয় নি এটা নিয়ে।
প্রসঙ্গত, প্রফেসর ড. মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে বিভাগের অর্থ আত্মসাৎ, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের হত্যাকাণ্ডে সমর্থন ও উসকানি, নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগে বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা গত ১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তার চাকুরিচ্যুতি ও অপসারণের আবেদন করে। তার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের গত ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত ৫৩৩-তম সভার ৭৫(ক) সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রফেসর ড. মুসতাক আহমেদকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয় এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটি বর্তমানে তদন্তকাজ করছে।
এমআই