মো: কাওসার আহমেদ:
মানুষ মানুষের জন্য। এই বাক্যটি কারো কাছে নিছক একটি বাক্য মনে হলেও সমাজে অনেকের কাছে এটিই ব্রত। মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে শুধুমাত্র নিজের জৈবিক চাহিদা সম্পন্নের মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের যে দায়িত্ব, তা পালন করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে প্রবেশ করে অনেকেই মানুষের প্রতি দায়িত্ব এবং কর্তব্য ভুলে যায় এবং ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেকে প্রতিযোগিতার বাজারে প্রস্তুত করতে। তবু এর মাঝে অনেকে আছেন, যারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়া, সামাজিক সচেতনতা, পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ কারতে চান। এমনি এক ঝাঁক মেধাবী মানবিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) 'চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন'। যারা দুঃস্থ এবং অসহায় মানুষের ব্রত রক্ষা করে চালছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নিজেদের উজাড় করে কাজ করছে তারুণ্যের এই সংগঠন। ২০১৮ সালে প্রথমে রক্তদানের মতো কার্যক্রম দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে শিক্ষা, চিকিৎসা,দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা,বঞ্চিত শিশু,সামাজিক সচেতনতা এবং পরিবেশ এই
ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কাজ করছে সংগঠনটি। ২০২৩ সালের শীত মৌসুমেও নোবিপ্রবির আশপাশে এবং নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন নদী ভাঙা এলাকা ও হাতিয়ায় ১ হাজার কম্বল ও ২০০টি সোয়েটার বিতরণ করেছে শিক্ষার্থীদের এ সংগঠনটি।
সংগঠনটির নেতারা জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা করেন। তাই সামাজিকভাবে তাদের দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি সে কথা চিন্তা করেই ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু করেন তারা।
চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশনের সভাপতি নুশরাত জাহান নিশাত জানায়, একজন সাধারণ মানুষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জায়গা থেকে চিন্তা করে দেখলে স্পষ্টভাবে বোধগম্য হবে জনগণের প্রতি সেই দায়ের কথা। যাদের ট্যাক্সের বড় একটা অংশ আমাদের পিছনে ব্যয় হয়। এছাড়াও এমন মানুষের জন্য কাজ করা, যাদের আসলেই আপনার সাহায্য প্রয়োজন। তাদের মুখের সেই হাসিটা যে মানসিক শান্তি দেয় তা হাজার কোটি দিয়েও কেনা সম্ভব নয়।'
নুশরাত বলেন, আমাদের সংগঠন সমাজ উন্নয়নে সব সময় অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে। প্রতিবছর শীতের তীব্রতায় কাতর মানুষগুলোর কথা ভেবে বিভিন্ন স্থানে শীত বস্ত্র বিতরণ করে সংগঠনটি। উপকূলীয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। পাশাপাশি যে সকল স্কুলে শিক্ষক সংকট সেসব স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন এর বন্ধুরা।
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে এই সংগঠনটি। এটি তাদের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। মূলত তিনটি ধাপে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে, নোবিপ্রবির আশেপাশের এলাকার দুস্থ মানুষদের কম্বল এবং ছোট বাচ্চাদের শীতের জামা দিয়ে সাহায্য করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে, নোয়াখালীর আশে পাশে নদীভাঙন এলাকা গুলোতে গিয়ে পর্যালোচনার মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এবং তৃতীয় ধাপে, নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী উপকূল ট্রেনে রাতে অন্ধকারে ঢাকা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যতগুলো প্লাটফর্ম আছে সব গুলোতে নেমে নেমে যারা দুস্থ মানুষ আছে তাদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। এই সব কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে সংগঠনটির সদস্যরা।
সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পরে বৃহত্তর নোয়াখালী। এ সময় ত্রাণ সহায়তা এবং বন্যা পরবর্তী পূনর্বাসনের জন্যও কাজ করে 'চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন'।
সংঠনের সদস্যরা জানায়, চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন "বৃক্ষরোপন অভিযান" নামক কর্মসূচি পালন করে থাকে। এটি শুধু নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ নয়।ক্যাম্পাসে আশেপাশে,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বৃক্ষরোপনের পাশাপাশি চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন এর সদস্যগণ নিজ নিজ জেলায় বা নিজ বাড়িতে গাছ লাগিয়ে থাকেন। প্রকৃতিকে নবরূপে সাজাতে কাজ করে এই সংগঠন।
এছাড়াও ক্যাম্পাস পরিষ্কার কর্মসূচি, জরুরি রক্তদানসহ নানা কাজের মাধ্যমে সুখ্যাতি অর্জন করে চলেছে নোবিপ্রবির চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন।
যে কোনো সংস্থা বা সংঠনের মূল চালিকাশক্তি হলো লোকবল। চলো পাল্টাই এর কতিপয় উদ্যমী ,সমাজ এবং মানব সেবায় ইচ্ছুক ও একনিষ্ট লোকবল দ্বারা সফলতার শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবে,যারা মানুষের জন্য সারা দিনে অক্লান্ত পরিশ্রম ও খাঁটুনির মজুরি হিসেবে একজন অসহায়ের মুখের হাসিটাকেই সাদরে গ্রহণ করেন। সেই সব উদ্যমী তরুণদের সংগঠন 'চলো পাল্টাই ফাউন্ডেশন '। যারা মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে সর্বদায় প্রস্তুত।
এমআই