প্রযুক্তি ডেস্ক:
মঙ্গলের দক্ষিণ গোলার্ধে বিষুব রেখার কাছে বেশ রহস্যময় একটি অঞ্চলের সন্ধান পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। মঙ্গল গ্রহে থাকা মাকড়সার জালটি আসলে মাকড়সা মানে জীবন্ত মাকড়সা- তা কিন্তু নয়। বরং মঙ্গলগ্রহের খুব কাছ থেকে নেওয়া ছবি থেকে দেখা যায় মঙ্গলের গায়ে হুবহু মাকড়সার মত চিহ্ন।
যে মাকড়সার দাড়াগুলি প্রায় ১ কিলোমিটার করে লম্বা। এগুলো কি? এভাবে মঙ্গলের মাটি আকার নিল কীভাবে? তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন তখন থেকেই।
পৃথিবীতে বসেই মঙ্গলের আবহাওয়া তৈরি করে সেই মাকড়সার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করলেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই তাঁরা জানতে পারলেন ওগুলি তৈরি হয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইডের বরফ দিয়ে। এমন অনেক মাকড়সার মত দেখতে লাল গ্রহের গায়ে ছড়িয়ে থাকা এই আজব ভূমি আকার কীভাবে এল তার একটা ধারনা বিজ্ঞানীরা পেয়ে গেছেন।
মঙ্গলে প্রতি শীতেই এই কার্বন ডাই অক্সাইডের বরফ তৈরি হয়। পরে যখন কড়া রোদ এসে পড়ে তখন সেই বরফ গলে জল হয়না, বরং সরাসরি বাষ্প হয়ে উবে যায়। যেমন ড্রাই আইসের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
এই বাষ্প যখন লাল গ্রহে উবে যায় তখন তা বাষ্পীভূত হওয়ার সময় তার ওপর থাকা মাটি ও বালি তুলে নিয়ে যায়। লাল গ্রহে যখন শীত কেটে যায়, বসন্ত আসে, তখন কার্বন ডাই অক্সাইড বরফ উবে যাওয়া অংশে ক্ষতচিহ্নের মত ফাটল দেখতে পাওয়া যায়।
এই ফাটলগুলিই পরবর্তী সময়ে মাকড়সার মত দেখতে লাগে। এভাবেই লাল গ্রহের বুকে এমন নানা অংশে মাকড়সার মত আকার দেখতে পাওয়া যায় বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
মঙ্গল গ্রহে থাকা মাকড়সার জালটি আসলে একধরনের স্ফটিকযুক্ত খনিজের কাঠামো। কাঠামোটি ৬ থেকে ১২ মাইলজুড়ে প্রসারিত। এ ধরনের কাঠামোকে বক্সওয়ার্ক বলে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন গুহার ভেতরেও দেখা যায়।
পৃথিবীতে থাকা বিভিন্ন গুহার ছাদে ক্যালসিয়াম কার্বনেটযুক্ত খনিজ পানির কারণে ফাটল তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে স্ফটিকে পরিণত হয়। অন্যদিকে মঙ্গল গ্রহেও এ ধরনের কাঠামো রয়েছে। তবে মঙ্গল গ্রহের প্রায় ৩ হাজার ৮০০ একরজুড়ে অবস্থিত বক্সওয়ার্ক পৃথিবীর থেকে বেশ আলাদা। এসব কাঠামো সমুদ্রের পানির মাধ্যমে তৈরি হওয়ায় সেখানে প্রাচীন জীবনের জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক কারস্টেন সিবাচ জানিয়েছেন, এ ধরনে কাঠামোতে আদি যুগে জীবাণু বেঁচে থাকতে পারত। আর তাই এসব জালে প্রাচীন জীবাণুর জীবাশ্মের প্রমাণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এমন ক্রিস্টাল ক্ষেত্র তৈরি করতে কমপক্ষে ১১৩ বিলিয়ন গ্যালন লবণাক্ত ও উষ্ণ খনিজ বোঝাই পানির প্রয়োজন।
নাসার গবেষকদের ধারণা, বৃহদাকার এমন ভূতাত্ত্বিক মাকড়সার জাল প্রথম মার্স রিকনেসান্স অরবিটার স্যাটেলাইটের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ২০০৬ সালে। বিজ্ঞানী সিবাচ বলেন, মঙ্গল গ্রহের জলজ জীবাণুর প্রমাণ এই বিশাল জালের কাঠামোতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জাল আকৃতির কাঠামো একটি তিন মাইল লম্বা এওলিস মন নামের পাহাড়ের ছায়ায় অবস্থিত।
তানহা আজমী