নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সেখানে জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির জোরালো দাবি জানিয়েছেন ছাত্র-জনতা। এছাড়া আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনের নেতারা।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ জুলাই বিপ্লবকেন্দ্রিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এছাড়া বিপুলসংখ্যক সাধারণ জনতাও এতে যোগ দেন।
বক্তারা বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, এর মধ্যে স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেউ কেউ। যখনই আমরা চিরতরে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে চাই, তখনই সুশীল বেশে কিছু ব্যক্তি ও দল বিরোধিতায় নেমে যায়। আমরা প্রয়োজনে তাদেরও প্রতিহত করব।
এ সময় ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি-আজাদি’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’-এসব স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা।
আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠের দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এ দেশের মানুষ এক নতুন বাংলাদেশ চায়। বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ যখন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠের আয়োজনের ঘোষণা দেয় তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ঘোষণাপত্র পাঠের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে এখনো খুনির দোসররা ঘাঁপটি মেরে আছে। সচিবালয় হোক বা যেকোনো জায়গা থেকে ষড়যন্ত্র করলে আমরা তাদের উৎখাত করে ছাড়বো।
সারজিস বলেন, গোপালগঞ্জে এখনো কীভাবে আমাদের ভাইদের ওপর হামলা হয়? যদি আমাদের নিরাপত্তা না দিতে পারেন, তাহলে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে আপনাদের আর বসিয়ে রাখবো না। আমরা দেখছি ছাত্রলীগ যুবলীগ এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তারা আমাদের আহতদের দেখে মুচকি হাসে। আমরা যদি বিচার করতে না পারি, তাহলে শহীদের আত্মাকে আমাদের জবাব দেওয়ার কিছু থাকবে না।
সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ঢাকায় আজকের মার্চ ফর ইউনিটিতে আসার সময় সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এখনো হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করে?
এই সমন্বয়ক বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে টালবাহানা কেন? শাপলা চত্বরের বিচার কেন আজও হচ্ছে না? সবকিছুতেই আমরা সরকারের তরফ থেকে টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি। হাসিনার পতনের পাঁচ মাসেও কেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না? এই ব্যর্থতার দায় কার? আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ইউনূস সরকার যেন সাবধান হয়ে যান।
এমআই