মো: মাহিদুজ্জামান সিয়াম, গবি:
একাধিকবার আশ্বাসের পরেও বাস না পেয়ে ক্ষোভের ঝড় তুলেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার ২৬ বছরেও দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সুবিধার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারেনি গবি প্রশাসন। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদেরকে আশ্বাস দিলেও সে বিষয়ে কার্যকারিতা দেখা যায়নি।
একদিকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অন্যদিকে সেদিকে তোয়াক্কা না করেই সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুইটি নতুন বাস উদ্বোধন করেছে গবি প্রশাসন। উদ্বোধনের ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে বলছেন, 'গণ বিশ্ববিদ্যালয় কি শুধু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়? শিক্ষকদের নিরাপদে ঘরে পৌছানোর ব্যাবস্থা টা তো হয়ে গেলো, ছাত্র-ছাত্রীদের টা হবে কবে?'
এর আগে, ২০২২ সালের অক্টোবরে মানিকগঞ্জ ও চন্দ্রা রুটে দুটি বাস চালুর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগ্রহীদের থেকে তথ্য আহ্বান করা হয়। পরে ২০২৪ এর জুনে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সোয়া কোটির অধিক মূল্যের দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নতুন বাসের ব্যবস্থা করা হয়। আশোক লেল্যান্ডের ৫২ আসন বিশিষ্ট বাস দুটি ক্যাম্পাসে আনা হলে শিক্ষার্থী মহলে শুরু হয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। সেসময় আগের বাস দুটি পরীক্ষামূলকভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য মানিকগঞ্জ ও চন্দ্রা রুটে চালু করার আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবহন শ্রমিকদের অসদাচরণ, পাবলিক বাসের ভোগান্তি, ভাড়া নিয়ে বিতর্ক, বাসে যৌন হয়রানির মত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন সুবিধা চালু করার জন্য প্রশাসনের কাছে দীর্ঘদিন যাবত আবেদন জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। শুধু আশ্বাসেই সময় পার করছেন তারা।
সর্বশেষ ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে তাদের ১৭ টি বাস আটক করা হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবারও জোরালো দাবী জানানো হলে জানুয়ারিতে দুই রুটে বাস চালুর আশ্বাস দেয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবির বলেন, 'প্রশাসন শিক্ষার্থী বান্ধব হলে আগে সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য বাস চালুর পর শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য নতুন বাস চালু করতো এতে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে তালবাহানা করে আশার আলো দেখিয়ে তারা নতুন বাস চালু করলো। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে চায় তাদের জন্য প্রশাসন কি করেছে? সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি পূরন না হলে অবশ্যই তারা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য মাঠে নামবে।'
ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. কদর সরকার বলেন, 'একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য বাস থাকবে এটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ব্যতিক্রম, এখানে শুধুমাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বাস থাকে শিক্ষার্থীদের জন্য কোন পরিবহন সুবিধা নেই। অথচ আমাদের আশেপাশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের সংখ্যা প্রায় ৮০ টির বেশি। যাতায়াতের যথাযথ ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়বে।'
তিনি আরও বলেন, 'উচিৎ ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য আগে বাস চালু করার পরে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাস চালু করা। কেননা তাদের জন্য তো বাস আছেই, যাদের নেই তাদের গুরুত্ব আগে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আচরণ একটি বৈষম্য মূলক আচরণ।'
অন্যদিকে প্রশাসনের দাবি পর পর দুইবার নোটিশ প্রদানের পরও শিক্ষার্থীদের থেকে পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ায় বাসের ব্যবস্থা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন জানান, সে সময় আমরা শিক্ষার্থীদের থেকে তেমন সাড়া পাইনি। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে গণপরিবহনে শিক্ষার্থী হয়রানির ঘটনা ও শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধা চালুর বিষয়ে বারবার দাবি জানানোর প্রেক্ষিতে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি বাস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নতুন দুটি বাস শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য চালু করে শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাস ওয়ার্কশপে পাঠানোর কার্যক্রম চলমান। ওয়ার্কশপ থেকে বাস দুটি শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য উপযুক্ত হলেই তাদের জন্য আমরা মানিকগঞ্জ ও চন্দ্রা রুটে পরিবহন সুবিধা চালু করব।
এমআই