নিজস্ব প্রতিনিধি
হুল ফোটা শীতে কাঁপছে দেশ, নেই সূর্যালোক। বিপর্যস্ত জনজীবন। কুয়াশায় মানুষের কাজের গতিও কমে গেছে। সন্ধ্যার আগেই বেশির ভাগ মানুষ ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন।
আজ শনিবারও ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার আকাশ ঘন থেকে খুবই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজো দেশের অধিকাংশ স্থানে সূর্যের আলো দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাত ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল, ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কগুলো ঘন থেকে খুবই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকতে পারে।
আবার পরদিন একটু দেরি করেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। একটু রাত বাড়লেই রাজধানীর রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ছে, রাত ১০টার পর কারফিউ অবস্থা মনে হয়।
অন্যান্য বারের চেয়ে এবার কুয়াশাসিক্ত শীতের দিনের সাথে এবারের দিনের বেলাটা বেশ পার্থক্য করা যায়। এবার দিনের বেলার কোনো এক সময়ও সূর্য দেখা যাচ্ছে না।
অপর দিকে ঘন কুয়াশায় দিন দিন তাপমাত্রা শুধুই কমছে। গত সাত দিনে সারা দেশেই তাপমাত্রা কমে গেছে ৫ থেকে ৮ থেকে ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা এত বেশি ঘন যে, সকালে বৃষ্টির মতো বিন্দু বিন্দু পানির মতো ফোটা পড়তে দেখা যায়।
ঘন কুয়াশায় বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ এবং রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ সতর্ক করেছে। আজ শনিবার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
তা সত্ত্বেও রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায় ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জানুয়ারিতে এমনিতেই প্রচণ্ড শীত পড়ে। ২০১৩ সালে ৯ জানুয়ারি দিনাজপুরে তাপমাত্রা নেমেছিল ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তখন ৪৫ বছরের মধ্যে ওই তাপমাত্রাই ছিল সর্বনিম্ন। এবারো এমন অথবা এর কাছাকাছি তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে।
ধোঁয়াটে কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা এত সামনে চলে এসেছে যে, ১০০ গজ সবকিছুই ঝাপসা দেখা যায়। সামনের রাস্তা দেখা যায় না বলে রাতে দূর পাল্লার যানবাহনে যাত্রী চলাচল কমে গেছে। বাধ্য না হলে এই সময়ে অনেকেই রাতে দূরে কোথাও যেতে চায় না।
দেশের দরিদ্র মানুষ কষ্টে আছে, বিশেষ করে শহরের বস্তিতে ও খোলা আকাশে রাতযাপনকারীরা। গ্রামের মানুষ ভালো নেই শহরের চেয়ে গ্রামে শীতের মাত্রা বেশি হু হু করে বাতাসে কুঁড়ে ঘরে বসবাসকৃত মানুষের রাতে ঘুম হয় না। হিমেল হাওয়ায় রাত বিভীষিকা মনে হয়। খড়-কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন তারা।
আবহাওয়া দফতর বলছে, আরো দুই থেকে তিন দিন এ ধরনের ঘন কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সোমবার অথবা মঙ্গলবারের দিকে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হলেই কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কুয়াশা। কারণ এই কুয়াশা ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে অর্ধেক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
আবহাওয়াবিদ মো: বজলুর রশীদ বলেন, এই কুয়াশা স্থানীয়ভাবে তৈরি জলীয় বাষ্প থেকে হচ্ছে এবং আরব সাগর থেকে ওঠে আসা জলীয় বাষ্পের সাথে যোগ হয়ে দিল্লি, উত্তর প্রদেশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে আসছে। প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃতি। ওপরের আকাশে এই জলীয় বাষ্প শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে বলে মেঘ হতে পারছে না বলে বৃষ্টিও হচ্ছে না।
যেহেতু ভারতের দিক থেকে আসছে, সেখানকার কোথাও বৃষ্টি হলেই কেটে যাবে এটা। মো: বজলুর রশীদ বলেন, দিনের বেলা সূর্যালোক পাওয়া যায় না বলে উচ্চ তাপমাত্রার সাথে নিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে। যেমন, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ স্যাটেলাই চিত্র বিশ্লেষণ করে বলছেন, গতকাল রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় অঞ্চল ছাড়া দেশের অন্যত্র কুয়াশায় ঢাকা ছিল আকাশ।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ ছাড়া দেশের অন্যত্র কুয়াশার পরিমাণ আরো ঘন হতে থাকবে।
সময় জার্নাল/এলআর