নিজস্ব প্রতিনিধি
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে শীর্ষ পর্যায়ের যেসব পুলিশ কর্মকর্তা যে দমন-পীড়ন ও খুন গুমে যারা জড়িত ছিলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সাবেক আইজিসহ তাদের ৯৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনরা।
তবে এখন পর্যন্ত শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও পলাতক রয়েছে ৯২৪ জন। ২৮ পুলিশ সদস্যের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
আর পলাতকদের মধ্যে শীর্ষ কর্মকর্তার তালিকায় রয়েছেন, সাবেক ডিবি প্রধান ও সাবেক ডিআইজি মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদ। ব্যাপক সামালোচিত এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মামলা রয়েছে ১৭১টি। তার অবস্থান সম্পর্কে এখনো জানতে পারেনি গোয়েন্দারা।
তিনি বিদেশে গেছেন নাকি আত্মগোপনে রয়েছেন গোয়েন্দাদের কাছে হারুনের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। অপর দিকে আওয়ামী লীগ সরকারে অত্যান্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ও হাবিবুর রহমানসহ পলাতক রয়েছেন অন্য কর্মকর্তারা।
যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সর্বোচ্চ ভূমিকায় উগ্রিব ছিলেন। ওইসব মামলার তালিকায় রয়েছেন সাবেক আইজিপি ছয়জন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ৩৬, বর্তমান অতিরিক্ত আইজিপি রয়েছেন ৫, সাবেক ডিআইজি ১২ জন, বর্তমান ডিআইজি ১১, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি ২, বর্তমান অতিরিক্ত ডিআইজি-৪৩, সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) ৩, বর্তমান এসপি ৬০, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৫৭, এএসপি ৩২ জন, পরিদর্শক ১৫৩, এসআই পদমর্যাদার ২৭৬, এএসআই ৮৯, নায়েক ২, ও চালকসহ কনস্টেবল রয়েছেন ১৬৫ জন।
নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা ও আহত করায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে পুলিশের এ বাহিনী। পরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা মামলা করা শুরু করেন।
হত্যা ও হত্যাচেষ্টার এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ৯৫২ জন পুলিশ সদস্যরাও আসামি হন। সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবলরাও আসামির তালিকায় আছেন।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের একাধিক কর্মকর্তা মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এখন পর্যন্ত পুলিশের সাবেক ও বর্তমান মিলে ৯৫২ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৭ জন সাবেক আইজিপি ও সাবেক অতিরিক্ত আইজপি। আসামির তালিকায় পুলিশের সব পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন। সব থেকে বেশি ২৭৬ জন সাব-ইন্সপেক্টর আসামি হয়েছেন।
সর্বোচ্চ ১৭১টি মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক ডিবি প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ। এই সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থান সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৫টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১৭টি, অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ১২৫টি, সাবেক এসবি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪৬টি মামলা হয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর