স্পোর্টস ডেস্ক:
প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে সাব্বির রহমানকে দলে ভেড়ায় ঢাকা ক্যাপিটালস। এতে সহজেই বোঝা যায়, ব্যাটিং অর্ডারে তাকে নিয়ে দলটির পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ঢাকা ৩টি ম্যাচ খেলে ফেললেও কোনোটিরে একাদশে জায়গা হয়নি সাব্বিরের। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে ঢাকার একাদশে না দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সেসব প্রশ্নের উত্তর আজ দিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ঢাকার কোচ জানালেন, শৃঙ্খলা মেনে না চলায় তাকে খেলানো হয়নি।
সাব্বির বলেই ব্যাপারটা অনেকের কাছে স্বাভাবিক মনে হতে পারে। অতীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অনেক কাণ্ডই ঘটিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই ক্রিকেটার। ১২ বছর বয়সী এক কিশোর দর্শকের গায়ে তোলার অভিযোগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তাকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বাদ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। এর আগে-পরেও অনেক বিতর্কে জড়িয়েছে সাব্বিরের নাম।
এবার নিজ দলের মধ্যেই নিয়ম না মেনে একাদশে উপেক্ষিত তিনি। ঢাকার কোচের বক্তব্য অনুযায়ী, সাব্বিরকে না খেলানোর মূল কারণ দলের কম্বিনেশন। তবে শৃঙ্খলাজনিত কারণটিও বড় করে দেখা হয়েছে। কারণ, শুরুতে কম্বিনেশনের কথা বললেও পরে সাব্বিরের নিয়ম ভঙ্গের ব্যাপারে অনেক মন্তব্য করেন সুজন। মূলত এ কারণেই একাদশে জায়গা হয়নি তার। ঢাকার দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল ২ জানুয়ারি। এর আগের দিন সকাল ৯টায় অনুশীলন শুরু করে দলটি, এদিনের অনুশীলনে অনুপস্থিত যোগ দেননি সাব্বির।
সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাব্বিরকে না খেলানোর কারণ ব্যাখ্যায় সুজন বলেন, 'সাব্বিরকে আমরা খেলাতে পারিনি, কম্বিনেশনের কারণে। এ ছাড়াও কিছু অন্য ইস্যু ছিল, অনেকেই হয়তো বলেছেন ফেসবুক বা সামাজিকমাধ্যমে। ভেতরের অনেক কিছু অনেকে জানে না বলে হয়তো মন্তব্য করে দেওয়াটা অনেক সহজ। এখানে আমার হাত ছিল না। অধিনায়কও ছিল দলে, তারও বলার থাকে অনেক কিছু।'
'ট্রেনিংয়ের ব্যাপারগুলো থাকে, যেগুলো আমরা বলতে পারি না অনেক কিছু। হ্যাঁ, ট্রেনিংয়ে সাব্বির অনুপস্থিত ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচের মাঝে অনুশীলনে আসেনি। টিম ডিসিপ্লিনের ব্যাপারও ছিল, এই কারণেই তাকে খেলানো হয়নি, বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচটি, যেটা ছিল ২ তারিখে। ওই ম্যাচটি খেলানো হয়নি ১ তারিখে অনুশীলনে না আসার জন্য। এটা পুরোপুরি ডিসিপ্লিনারি ইস্যু।' যোগ করেন ঢাকার কোচ।
শৃঙ্খলাজনিত কারণ থাকলেও ক্রিকেটার সাব্বিরের প্রতি আস্থা আছে সুজনের। সিলেট পর্ব থেকেই ঢাকার একাদশে তিনি থাকবেন জানিয়ে সুজন বলেন, 'সাব্বির ভালো ক্রিকেটার। আশা করি, কালকের ম্যাচ থেকে ওকে খেলাতে পারব এবং আশা করি সেরাটা খেলবে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সে, একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারর অভাব আছে আমাদের মিডল অর্ডারে। সাব্বিরের অন্তর্ভুক্তি আমাদের জন্য খুব ভালো হবে। এটা খুব সহজ পাবলিকলি বললাম, কারণ একটা দূরত্ব থেকে যেতো, এ জন্য বলে দিলাম। ওর ভক্তরাও বুঝতে পারবে যে ও কেন খেলেনি। এই একটা কারণই ছিল। আশা করি ওকে কালকের ম্যাচ থেকে খেলাতে পারব ও ওর সার্ভিসটা পাব।'
কোনো ক্রিকেটার অনুশীলনে যেতে না পারলে দলকে জানাতে হয়। সাব্বির অনুশীলনে না যাওয়ার ব্যাপারে ঢাকার কাউকে কিছু জানাননি। জানালে ব্যাপারটি শৃঙ্খলাভঙ্গের পর্যায়ে যেতো না জানিয়ে সুজন বলেন, 'আমি ওকে বলেছি যে, না-ই আসতে পারে অনুশীলনে। অনেক ক্রিকেটারই ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করে না। কিন্তু আমি চাই, আমার প্রত্যেকটি ক্রিকেটার ম্যাচের আগের দিন ট্রেনিং করুক বা না করুক, ড্রেসিং রুমে যেন থাকে। সাব্বিরকে এটাই বুঝিয়েছি।'
'১ তারিখের অনুশীলনে সে আসবে না, এটা আমরা কেউ জানতাম না যে কেন সে আসেনি। ডিসিপ্লিনারি ইস্যু এ জন্যই বললাম, যদি বলে নিতো, তাহলে সেটা ডিসিপ্লিনারি ইস্যু নয়। কিন্তু আমি বা ম্যানেজার বা কেউই জানত না। মাঠে গিয়ে যখন তাকে খুঁজি, জানি না যে সে কেন নেই, তাহলে তো সত্যিই শকিং ব্যাপার।' বলেন সুজন।
সাব্বির নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছে বলে জানান সুজন। তার ভাষায়, 'আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি। সে অনুধাবন করতে পেরেছে। সে বলেছে যে, "সুজন ভাই ভুল হয়েছে, আপনি রাগ করবেন না।" আমার বিশ্বাস, ঢাকা ক্যাপিটালসের বাকি পুরো পথচলায় সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে সে আমাকে সাপোর্ট করবে এবং সিনিয়র ক্রিকেটারের মতো আচরণ করবে। যেন ওর কাছ থেকে আমর ভালো সার্ভিস পাই। আমি মনে করি, এই ব্যাপারগুলো সে মেনে নেবে এবং কালকে নতুনভাবে নিজের সেরাটা দেবে দলের জন্য।'
বিপিএলে ভালো সময় যাচ্ছে না ঢাকা ক্যাপিটালসের। ঢাকার প্রথম পর্বে তিনটি ম্যাচ খেলেছে তারা, তিন ম্যাচেই সঙ্গী হয় হার। পয়েন্ট তালিকার ছয় নম্বর দল ঢাকা ক্যাপিটালস। তবে ঢাকা পর্বের হতাশা ঝেরে ফেলে সিলেটে জয়ে ফিরতে মরিয়া দলটি। এই পর্বে তাদের মিশন শুরু হবে ৭ জানুয়ারি। কাল সিলেট স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ রংপুর রাইডার্স, ম্যাচটি শুরু হবে বেলা দেড়টায়।
এমআই