সময় জার্নাল প্রতিবেদক, ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আজ থেকে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ব্যতীত সব গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সারাদেশে চলছে সীমিত পরিসে লকডাউনও।
গণপরিবহন চলাচল বন্ধের প্রথম দিনে নানা দুর্ভোগ আর অতিরিক্ত কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে অফিসগামী মানুষের। তারা রিকশা, রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
সোমবার সকাল ৮ টা থেকে রাজধানীর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠানসমূহ শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা থাকলেও। মাঝারি-ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নানা ভোগান্তি পার করে অফিসে আসতে হচ্ছে।
সুমাইয়া আক্তার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে যাবেন আগারগাঁও। দীর্ঘ এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে কোনো পরিবহন না পেয়ে রিকশায় যাত্রা শুরু করেন আগারগাঁও উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, সীমিত পরিসে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। অফিস খোলা আছে। অফিস তো যেতেই হবে। চাকরি বাঁচাতে হবে। চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়ে যাব। যত কষ্ট পোহাতে হয় আমাদের মত সাধারণ মানুষের। ৮০ টাকার ভাড়া রিকশা চালক নিচ্ছে ১৩০ টাকা। যে যেভাবে পারছে ভাড়া চাইছে, বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। কে দেখবে এইসব অসংগতি আর সমস্যা?
সারমিন সুলতানা আয়াত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সায়েদাবাদ থেকে যাবেন বনশ্রী। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে কোনো পরিবহন না পেয়ে রিকশায় যাত্রা শুরু করেন । রিকসাতেও ভোগান্তি সরাসরি কোন রিকসা যাবে না। তাকে একবার রিকশা পরিবর্তন করে যেতে হয়েছে গন্তব্যে। তিনি বলেন, আমার যেতে আসতে ভাঁড়া লাগতো ১০০ টাকা সেখানে আজ আসতেই লাগলো ২৫০ টাকা। ভাঁড়া বেশি দেয়ার পরও রাস্তায় নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
আরেক চাকুরিজীবি আসিফুজজামান জানালেন, গণপরিবহন বন্ধ হলেও আমাদের অফিস যেতে হয়। বাস না থাকায় আজ ভাঁড়া গুণতে হচ্ছে ৫-৬ গুণ বেশি! তিনি মোহাম্মাদপুর থেকে বনশ্রী আস্তে-যেতে লাগতো ১৪০ টাকা । আজ আসতে রিকশা ভাঁড়া লেগেছে ৪২৫ টাকা।
বেসরকারি চাকুরিজীবি সোনিয়া আক্তার ও জানালেন একই কথা। তিনি মৌচাক থেকে বনশ্রী এসেছেন ২০০ টাকা ভাঁড়া দিয়ে। যেখানে তার অন্য দিন লাগতো ৬০ টাকা। তিনি বলেন, আজ থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সীমিত পরিসরে লকডাউন ও চলছে কিন্তু আমাদের অফিস তো বন্ধ না। তাই এভাবে কষ্ট করেই অফিসে আসছি।
অন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমিনুল হক। মিরপুর ২ নম্বর থেকে পায়ে হেঁটে এসেছেন মিরপুর ১০ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে গুলশানে যাওয়ার কোনো যানবাহন পাচ্ছিলেন না। তিনি বলেন, সরকার অফিস বন্ধ না করে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে। এভাবে কি সাধারণ মানুষকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করা যায়? মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হয়।
রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালক মো. সালমান বলেন, অফিসগামী মানুষ যে যেভাবে পারছেন অফিস যাচ্ছেন। কেউ রিকশা, সিএনজি ও রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে যাচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, এবারের সীমিত পরিসরে ‘লকডাউনে’ রাইড শেয়ারিং বন্ধের বিষয়ে কিছু বলে নাই সরকার। বন্ধ হওয়ার ঘোষণার আগ পর্যন্ত বাইক চালাবো। রাইড শেয়ারিং করে যে কটা টাকা উপার্জন হয় তা নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় না বের হলে না খেয়ে থাকতে হবে। অন্যান্য দিনের তুলনায় রাইড শেয়ারিং এর ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক পল্লবী জোনের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর (টিআই) মো. কাওছার উদ্দিন বলেন, আজ থেকে দেশে চলছে সীমিত পরিসরে ‘লকডাউন’। জরুরি কাজে জড়িত ডাক্তার-গণমাধ্যমকর্মীদের পরিবহনে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর আগে, রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ব্যতীত সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
সময় জার্নাল/আরইউ/এমআই