আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে উত্তর গাজায় তাদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স/খলিল রামজি
প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্বের পর আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
আজ সকাল সাড়ে ৮টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও—হামাস মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের নামের তালিকা সরবরাহ না করা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি শুরু হবে না বলে জানিয়ে দেয় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। উল্টো এই সময়ের পর গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
তবে হামাস তিন বন্দির নাম ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আন্সারি এক বিবৃতিতে বলেন, 'গাজায় যুদ্ধবিরতি কখন শুরু হবে—এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করছি যে আজ মুক্তি পেতে চলা তিন বন্দির নাম ইসরায়েলি পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'তারা তিনজন ইসরায়েলি নাগরিক, তাদের মধ্যে একজন রোমানিয়ান এবং একজন ব্রিটিশ নাগরিক। এর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।'
ইসরায়েলও নিশ্চিত করেছে, তারা চুক্তির প্রথম দিনে মুক্তি পাবে এমন তিনজন বন্দির নাম পেয়েছে।
১৫ মাস ধরে চলা এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ইতি টানা এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মূল শর্তগুলো হলো:
• প্রাথমিক পর্যায়ে, যুদ্ধবিরতির প্রথম ছয় সপ্তাহে ধীরে ধীরে গাজার কেন্দ্র থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে এবং উত্তর গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবে।
• চুক্তিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রতিটি দিন ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, যার মধ্যে ৫০টি ট্রাক হবে জ্বালানিবাহী। এর মধ্যে ৩০০টি ট্রাক উত্তর গাজায় পাঠানো হবে, কারণ সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের পরিস্থিতি সবচেয়ে করুণ।
• হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, এর মধ্যে নারী (সেনা ও বেসামরিক), শিশু এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষ থাকবে। হামাস প্রথমে ১৯ বছরের কম বয়সী নারী জিম্মিদের মুক্তি দেবে এবং পরে ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের মুক্তি দেবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর রেড ক্রসের মাধ্যমে তিন নারী জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
• ইসরায়েল প্রতিজন সাধারণ বন্দির জন্য ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে এবং প্রতিজন ইসরায়েলি নারী সৈন্যের জন্য ৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে।
• চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, হামাস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি)-কে জানাবে মুক্তি দেওয়া ইসরায়েলি জিম্মিরা গাজার ঠিক কোন স্থানে থাকবে। এরপর আইসিআরসি সেই স্থান থেকে তাদের উদ্ধার শুরু করবে।
• প্রথম পর্যায় শেষে ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে আটক করা সমস্ত ফিলিস্তিনি নারী এবং ১৯ বছরের কম বয়সী শিশুকে মুক্তি দেবে। হামাস কতজন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দেবে, তার ওপর নির্ভর করবে ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির মোট সংখ্যা। নারী, পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে ফিলিস্তিনি বন্দির সংখ্যা ৯৯০ থেকে ১,৬৫০ এর মধ্যে হতে পারে।
১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপের পাশ দিয়ে হেঁটে তাদের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করছে। ছবি: রয়টার্স
• হামাস প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনজন করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দেবে। ৩৩ জিম্মির বাকি অংশ মুক্তি দেবে চুক্তির শেষের দিকে। সমস্ত জীবিত জিম্মিকে প্রথমে মুক্তি দেওয়া হবে, তারপরে মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হবে।
• কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।
• চুক্তির প্রথম পর্যায়ের শেষের ১৬তম দিনে দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা শুরু হবে এবং এতে ইসরায়েলি পুরুষ সৈন্যসহ অবশিষ্ট সব জিম্মিকে মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
• তৃতীয় পর্যায়ে বাকি সব মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা এবং মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গাজার পুনর্গঠন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৬ হাজার ৮৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়েছে। একই দিনে হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষ বন্দী হয়।
এমআই