জাহিদুল ইসলাম, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল স্বপ্নদ্রষ্টা শিক্ষার্থীর হাতে গড়ে ওঠা ব্যতিক্রমী সমাজসেবামূলক সংগঠন ‘ইচ্ছে’ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংগঠনটি নিবেদিতপ্রাণ। ২০১২ সালে মানবিকতা ও স্বপ্নবুননের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘ইচ্ছে’। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এটি হয়ে উঠেছে অসহায় শিশুদের আলোর দিশারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে খামারবাড়ি সংলগ্ন ইচ্ছে’র স্কুলে এই সকল কার্যক্রম পরিচালিত করা হয়।
‘ইচ্ছে’র প্রতিটি সদস্য, যাদের ‘ইচ্ছেডানা’ বলা হয়। নিজেদের শ্রম ও মেধার বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেন। তাদের উপার্জিত অর্থ ব্যয় হয় এই শিশুদের শিক্ষা, পোশাক, খাদ্যসামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য খরচে। দান বা চাঁদার পথ বেছে না নিয়ে নিজেদের স্বকীয়তাকে অটুট রেখেই তারা তৈরি করেছেন মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ। আত্মসম্মানের এই অনন্য দৃষ্টান্ত শুধু শিশুদের জীবন নয়, তাদের পরিবারের স্বপ্নও বুনে চলেছে।
সংগঠনটি ‘শ্রম দেই, মেধা দেই, আর্ত-মানবতার সেবা করি এবং পৃথিবী বদলে দেই’—এই মহান আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের কার্যক্রম শুধু শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বয়স্কদের জন্য শিক্ষাদান কর্মসূচিও তারা পরিচালনা করে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এবং মানবিকতার বন্ধন দৃঢ় করতে তারা প্রতিনিয়ত কাজ করছে।
'ইচ্ছে' এর সাধারণ সম্পাদক আশিক বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করা,শিশুদের শিক্ষার ব্যয়ভার, পোশাক, খাদ্যসামগ্রী ও তাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে সহযোগীতার লক্ষ্যে 'ইচ্ছে ' যাত্রা শুরু হয়।। এছাড়া ইদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ইফতার সামগ্রী ও ঈদ বস্ত্র বিতরণ করে থাকি। এছাড়া সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেসের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কাজ করে থাকে ইচ্ছে। যেমন সম্প্রতি বিদ্যুত এবং পানি অপচয় রোধ করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে এবং একাডেমিক ভবনে সচেতনামূলক পোস্টার লাগানো হয়।
এসময় তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের আশেপাশের শিশুদের নিয়ে আমাদের প্রাথমিক পথচলা শুরু হয়। এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল যে, সমাজে যারা সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে তাদের চলার পথকে কিছুটা সহজ করে দেওয়া। ইচ্ছে’ কোনও প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তির থেকে ডোনেশন গ্রহণ করে না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন ১৪ ফেব্রুয়ারি, পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখে ক্যাম্পাসে ফুলের স্টল থেকে যে লভ্যাংশ আসে সেটা ব্যয় করা হয় বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে।
‘ইচ্ছে’র এই স্বপ্নবুনন ও মানবসেবার পথে এগিয়ে চলার গল্প আসলে শুধু একটি সংগঠনের নয়, বরং এটি মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তাদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা ও মানবিকতার সংমিশ্রণ বদলে দিতে পারে সমাজের প্রতিটি স্তর। ‘ইচ্ছেডানারা’ কেবল স্বপ্ন দেখেন না, তারা স্বপ্ন পূরণও করেন—তাদের হাত ধরে সমাজে বঞ্চিত শিশুদের চোখেও জ্বলে ওঠে ভবিষ্যতের নতুন আশার আলো।
এমআই