শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

সংকট-জটিলতায় কমে যাচ্ছে হাবিপ্রবির বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা

শুক্রবার, জানুয়ারী ৩১, ২০২৫
সংকট-জটিলতায় কমে যাচ্ছে হাবিপ্রবির বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা

মুরাদ হোসেন, হাবিপ্রবি:

নেপাল, ভুটান, ভারত, জিবুতি,নাইজেরিয়া ও সোমালিয়ার শিক্ষার্থীদের পদচারণায় একসময় মুখরিত থাকতো উত্তর জনপদের আশার বাতিঘর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। অথচ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার। সর্বশেষ ২০২৪ সেশনে ১৮ জন ভর্তির আবেদন করলেও আসেনি প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৯৮ জন। তন্মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ৭৭ জন, মেয়ে শিক্ষার্থী ২১ জন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আবাসিক হলের ব্যবস্থা না থাকায় ছেলেরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলে এবং মেয়েরা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে অবস্থান করেন।

প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী ভর্তি হয়না। ভিসা জটিলতা, সেশন জট,দীর্ঘ সময়ের স্নাতক কোর্স, এ দেশের সংস্কৃতির সাথে পার্থক্য, দেশের অভ্যন্তরিন রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। অন্য সুত্রে জানা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের দেশের শিক্ষার্থীদেরকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে অনাগ্রহ সৃষ্টি করে। যেকারণে এবছরও অল্প সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বিদেশি শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা জানান, কম খরচে ডাক্তারি পড়তে তারা বাংলাদেশে আসতে চায়। মেডিকেলে সুযোগ না পেয়ে তারা ডিভিএম সহ অন্যান্য বিষয়ে স্নাতকে ভর্তি হন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ কম থাকায় এখন বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদেশি শিক্ষার্থী বলেন, ' হাবিপ্রবি তে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেশন জট, অতিরিক্ত আবাসিক ফি (মাসিক ১০০০ টাকা), সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় কমে যাচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।'

একাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, 'পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তৈরি না হওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। তারা বলছেন, শিক্ষার পরিবেশ ও মানের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আগে যেসব দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসতেন, সেসব দেশ উচ্চ শিক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।'

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের হল-সুপার প্রফেসর ড. মো. মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ' বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। হাবিপ্রবিতে এ কার্যক্রম চলমান। একইসাথে তাদেরকে আলাদা আলাদা সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে আগ্রহী করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক স্থানের সাথে, বিশেষ করে মেয়েদেরকে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক অসুবিধা দেখভাল, দিনাজপুর মেডিকেলে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে'।  

ইন্টারন্যাশনাল হলের হল সুপার প্রফেসর ড. মোঃ আদনান আল বাচ্চু জানান, 'বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, একাডেমিক কাউন্সিল এবং হল প্রশাসনের সমন্বয় দরকার। পাশাপাশি তাদের জন্য স্বতন্ত্র হল তৈরি করাও জরুরি'। 

হাবিপ্রবি প্রশাসন বিগত সময়ে সর্বোচ্চসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুনাম অর্জন করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশন শাখার দায়িত্ব নিয়মিত পরিবর্তন হলেও নির্দিষ্ট সিটের বিপরীতে অল্প সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভৌগোলিক কারণে নেপালি শিক্ষার্থীরা হাবিপ্রবিতে পড়তে আগ্রহী হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় কমে যাচ্ছে নেপালি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশন শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ হাসানুজ্জামান জানান, ' শিক্ষার্থী আনার জন্য বিভিন্ন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। তবে আফ্রিকান নাগরিকদের অপরাধ প্রবণতার জন্য সরকার তাদের যাচাই বাছাই করে এদেশে আসার অনুমতি দেন। এতে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং ওই অঞ্চল থেকে খুব বেশি শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না।'

তিনি আরো জানান,' ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশনে নির্দিষ্ট অফিস এবং জনবল না থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়না। ফলে তারা বিভিন্ন অসুবিধায় পড়েন। বর্তমান শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিকভাবে মোটিভেট করা হচ্ছে যেন তাদের মাধ্যম দিয়ে এখানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আসে। '

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, 'বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতা সহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সেসব খুঁজে বের করে সমাধান করার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয়।'

উল্লেখ্য, এবছর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে হাবিপ্রবিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির চাহিদা দেওয়া হয়েছে ৮০ জন। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গত এক দশকে সর্বোচ্চসংখ্যক বিদেশি গ্রাজুয়েট তৈরী করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। হাবিপ্রবিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ২০১৪ সালে ভর্তি হয় মোট ২২ জন, ২০১৫ সালে ৪২ জন, ২০১৬ সালে ৫৯ জন, ২০১৭ সালে ৬১ জন, ২০১৮ সালে ৬১ জন, ২০১৯ সালে ২৫ জন এবং ২০২০ সালে ৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন বলে জানা যায়।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল