মো. মাহিদুজ্জামান সিয়াম, গবি প্রতিনিধি:
গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য ও রকমারি পিঠার সমাহার ঘটেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। ষষ্ঠবারের মতো এ পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বেলা ১১ টায় ঘুড়ি ও কবুতর উড়িয়ে এ পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন।
উৎসবে শিক্ষার্থীরা নানা নামের বাহারি নকশার মুখরোচক পিঠা নিয়ে হাজির হন। নারকেল পুলি, ইলিশ পিঠা, দুধ পুলি, ভাপা, পোয়া, পাটিসাপটা, ঘর কন্যা, কুটুম, হাতকুলিসহ মেলায় বাহারি পিঠার পাশাপাশি হরেক রকমের মিষ্টি, কেক, চা ও লাড্ডু বিক্রি করা হয়। এছাড়া চুড়ি, ফিতা এবং গোলাপ ফুলও বিক্রি হয়।
পিঠা উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যায় আনন্দের ফোয়ার। ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের নবীন শিক্ষার্থী মাসরুফা জান্নাত জানান, ঢাকার মত একটি ব্যস্ত শহরে আমরা পিঠা উৎসবের মত গ্রামীণ অনুষ্ঠানগুলো হারাতে বসেছি। সব স্টল এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে যে, নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে ক্যাম্পাসে এসে এমন গ্রামীণ পরিবেশে উৎসব মুখর পরিবেশ পেয়ে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি।
পিঠা উৎসবের আয়োজক কমিটির সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও প্রকাশন বিভাগের প্রধান ড. আলী আজম খান বলেন, ‘আবহমান বাংলায় পিঠা উৎসব চমৎকার এক নিদর্শন। আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশজ সংস্কৃতিকে অন্তরে লালন-পালন করে। পিঠা উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা দেশজ সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখছে এটি অতন্ত আশাব্যঞ্জক। প্রতিবারে দেশজ সংস্কৃতির এই ধারাকে অব্যাহত রেখে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পিঠা উৎসব আয়োজনের সুযোগ করে দেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন স্টলগুলো ঘুরে দেখেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্য কে ধারণ করে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শিক্ষার্থীরা পিঠা উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। আগের তুলনায় এবারের স্টলগুলো সাজানোর ধরণ, পিঠার সংখ্যা ও গুনগত মান সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আমার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের আবহমান গ্রামবাংলার এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরকে ধরে রাখবে বলে আমি আশাবাদী।’
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রতিটি স্টলের নাম ছিলো রকমারি। ঢেঁকির বৈঠক, টোনাটুনির পিঠাঘর, পিঠাকুঞ্জ, সপ্তধরা পিঠাঘর, মাইক্রোবিয়াল মিষ্টান্ন, কানুনি পিঠা মহল, তর্কমাধুরী সহ নানা নামে ২৭টি স্টল। শিক্ষার্থীরা বাঁশের চাটাই, খড়কুটো, কলাগাছ দিয়ে স্টলগুলো সাজিয়ে গ্রামীণ পরিবেশের আবহের সৃষ্টি করেছেন। আলোকসজ্জা, বেলুন, প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুনে সাজানো হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানজুড়ে ছিলো বাহারি নকশার পিঠার প্রদর্শনী, গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির আয়োজনে রম্য বিতর্ক ‘পিঠা হিসেবে আমিই সেরা’, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও মিউজিক সোসাইটির পরিবেশনায় নৃত্য ও লোকগান পরিবেশনা, রাফেল ড্র, এবং সর্বশেষ হাইওয়ে ব্যান্ড দলে পরিবেশনা।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল, পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক আবু হারেজসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (গবিসাস) উদ্যোগে প্রথমবারের মতো পিঠা উৎসব হয়। এরপর ২০১৭, ২০২০ ও ২০২৩ সালে এ উৎসবের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। সর্বশেষ, গত বছর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়।
এমআই