শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: বাসের সিটে বসা নিয়ে দফায় দফায় মারামারি

রোববার, ফেব্রুয়ারী ২, ২০২৫
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: বাসের সিটে বসা নিয়ে দফায় দফায় মারামারি

সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:

বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের অনুষদ ভবনের সামনে আইন বিভাগ ও আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও শিক্ষকরাও আহত হয়েছেন। পরে রোববার শিক্ষকদের আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের উপর হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করে দোষীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় একই দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে শাখা ছাত্রদল। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন- শনিবার রাতের ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে আল-ফিকহ্ বিভাগ ও অন্য অনুষদের শিক্ষার্থীরা তাদের উপর হামলা করে। আইন বিভাগের ইমেজ নষ্ট করতে শিক্ষকদের উপর হামলা নিয়ে বিভাগটির শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দাবি তাদের। অন্যদিকে শিক্ষকের গায়ে হাত দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই রাতে মারামারির ঘটনা বলে দাবি আল-ফিকহ্ বিভাগের শিক্ষার্থীদের।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসে ছেড়ে আসা একটি ডাবল ডেকার বাসে আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের তিন শিক্ষার্থী তাদের বন্ধুদের জন্য ‘জ্যাকেট’ দিয়ে দুইটি সিট ধরে। পরে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমন অভ্র বাসে উঠে জ্যাকেট সরিয়ে ওই সিটে বসে। এ নিয়ে সুমন ও বাসে থাকা পরিসংখ্যান বিভাগের হাসান ইবনে আব্দুল আজিজের সঙ্গে আল-ফিকহ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিহাব ও রাকিবের বাকবিতণ্ডা হয়। এতে তাদের মাঝে হাতাহাতিতে সুমনের মুখে আঘাত লাগে।

সুমনের দাবি, সিটে বসা নিয়ে হাসান ভাইকে মারতে উদ্যত হলে তখন তাদের নিবৃত্ত করতে যায় সুমন। তখন রাকিব তাকে ঘুষি মারে ও শার্ট ছিড়ে দেয়। তবে রাকিব বলছে, সুমন আমার শার্টের কলার ধরলে আমি তাকে ধাক্কা দিয়েছি। শার্ট ছেড়ার মতো কোনকিছু হয়নি। সে হয়তো আমাকে ফাঁসানোর জন্য নিজেই নিজের শার্ট ছিড়েছে।

এদিকে সুমন মুঠোফোনে এ ঘটনা প্রক্টরকে জানালে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা বাস ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে উপস্থিত হয়। সুমন ঘটনাটি আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জানালে তারাও সেখানে উপস্থিত হয় এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাস ক্যাম্পাসে পৌঁছালে তারা বাসটি ঘেরাও করে। এসময় তারা বাসের সামনের গ্লাস ভাংচুর করে বলে জানান বাসের চালক। পরে আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সেখানে উপস্থিত হয়। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সমাধানে রাত ১০টার দিকে প্রক্টরিয়াল বডি উভয়পক্ষের শিক্ষকদের নিয়ে অনুষদ ভবনের প্রক্টর অফিসে আলোচনায় বসে।

পরে আলোচনা শেষে দু’পক্ষের মাঝে সমঝোতা হলে প্রক্টর তা ভবনের গেইটে শিক্ষার্থীদের জানানোর সময় হঠাৎ দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে দফায় দফায় তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এছাড়া মারামারি থামাতে গিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও আহত হন। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের বিভাগকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা ও আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানকে ধাক্কা দেওয়ার প্রতিবাদ করায় বাকবিতন্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, বাসের ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডি সিদ্ধান্ত দিলে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তবে সেখানে উপস্থিত আল ফিকহ ও অন্য অনুষদের কিছু শিক্ষার্থী ‘আলফিকহ’ বিভাগের নামে স্লোগানসহ বিভিন্ন উস্কানীমূলক বক্তব্য দেয়। এরপর তারা আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত ও পরিকল্পিত হামলা চালায়। এ হামলায় বঙ্গবন্ধু হলের যাকারিয়া, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আমিনুর ও লালন শাহ হলের হাসানুল বান্না সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা ছিলেন বলে দাবি তাদের। তবে এবিষয়ে তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই বলে জানান তারা। তবে আহতরা তাদের কাছে এ অভিযোগ করেছেন।

প্রক্টরকে ধাক্কা দেওয়ার বিষয়ে তারা বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এর সাথে জড়িত নয়। হামলার সময় প্রক্টর নিবৃত্ত করতে গেলে তিনি হামলার মাঝখানে পড়ে যান। পেছন থেকে একজন ওই শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দিলে সে স্যারের গায়ের উপর গিয়ে পড়ে। আর হামলার মাঝখান থেকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরাই প্রক্টর স্যারকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন।
 
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও বলেন, আমাদেরকে মারধর ও আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে। গতরাতে বাস ভাংচুরের ঘটনার সাথেও তারা জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, সব বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল