নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, রাসেল এবং আওয়ামী দোসর ও সন্ত্রাসীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতারা। আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ডাকে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১২টার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশে নেতাকর্মীরা বলেন, 'গাজীপুর থেকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা হবে।' পাশাপাশি, বক্তারা 'খুনি হাসিনা' ও তার সহযোগীদের ট্রাইব্যুনালে বিচার, শুক্রবার রাতের হামলায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে বিচার, উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান।
সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বের হয়ে দুপুরে মহানগরীর রাজবাড়ী মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, জাতীয় নাগরিক কমিটি, গাজীপুর জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ, ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ আওয়ামী বিরোধী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। সেখানে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা হয়েছিল, তাদের বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। পরে ১৫ জন শিক্ষার্থী ঘটনা কী হয়েছে তা জানার জন্য সেখানে গেলে, ওই বাড়ির আশপাশে লুকিয়ে থাকা সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রাসেল ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের অনুগত আওয়ামী সন্ত্রাসী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিতভাবে দা, বটি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এতে শিক্ষার্থীরা আহত হয়।'
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, ছাত্রদের রক্ষা করার জন্য পুলিশকে ফোন করে বারবার অনুরোধ করলেও তারা সাড়া দেয়নি। প্রথমে চারজন পুলিশ পাঠানো হয়। তার সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও, কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
তারা বলেন, এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ও দায় রয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ বিপ্লবকে এখনও মেনে নিতে পারেনি। তাদের মধ্যে এ বিপ্লবের প্রতি কোনো আনুগত্য নেই। এ সময় তারা গাজীপুর মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল রাজবাড়ী মাঠ থেকে শুরু হয়ে মহানগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। এতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা 'ঢাকা না গাজীপুর, গাজীপুর গাজীপুর', 'দিয়েছে তো রক্ত, আরো দিব রক্ত', 'জ্বালোরে জ্বালো আগুন জ্বালো, স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে', 'আওয়ামী লীগের গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে', 'ছাত্রলীগের কালো হাত ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও' স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আলী নাসের, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিম, শুক্রবার রাতের হামলায় আহত শিক্ষার্থী নাবিল, ইসলামী ছাত্র শিবিরের গাজীপুর মহানগরীর শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদকসহ অনেকে।
সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, 'আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনো তার দোসররা আমাদের আশপাশে রয়েছে। সমাবেশ চলাকালেও আমাদের ভাইদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রশাসনের অনেকের এ বিপ্লবের প্রতি আনুগত্য নেই। আমাদের সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলা করা যাবে না।'
এমআই