নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ছয় সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জরুরি সংস্কার শেষে ভোটের দিকে যাবে সরকার।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক বিফ্রিংয়ে তিনি একথা বলেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনলাইন আপলোড করা হয়েছে। কমিশনগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারের কথা বলেছেন। যা আগামী নির্বাচনের আগে করা যেতে পারে। আশু করণীয় কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যের প্রয়োজন হবে।
আশু করণীয় কাজগুলো করতে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে। আবার কিছু সংস্কার এক মাসেই হয়ে যাবে।
সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির মধ্যে থেকে আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী। যদি তারা রাজি থাকেন, রোজার মধ্যেও আলোচনা চলবে। আর রাজনৈতিক দলগুলো যে দ্রুত নির্বাচন চান, আমি মনে করি সেটা বলার অধিকার তাদের আছে এবং দ্রুত বলতে কী, সেটা (তারা) স্পেসিফাই করে বলেননি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, আমাদের এই সরকারের অযথা সময়ক্ষেপণ করে সরকারে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। আমরা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র মেরামতের মৌলিক শর্ত পূরণ করার জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কারগুলো অতিজরুরি, সেগুলো করার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা চলে যেতে চাই। এটা নিয়ে কোনোরকম দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই।
নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে সে ব্যাপারে উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের সময়রেখা নিয়ে বারবার আমাদের প্রধান উপদেষ্টা এবং তার পক্ষে প্রেস সেক্রেটারিও ক্লেরিফাই করেছেন। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। আবার বর্ষার কথা বিবেচনা করে ২০২৬ সালে সেটা এগিয়ে এপ্রিল বা মার্চে হতে পারে।
বিফ্রিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একই দিন রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গঠিত ছয় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইট এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইটে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনার পতনের তিন দিনের মাথায় গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার গঠনের ১ মাস ৩ দিনের মাথায় গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বহুল আলোচিত ছয়টি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয় সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান করা হয় অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে।
গত ১৫ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ এবং সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিতে দেরি করে। অবশেষে এই দুই কমিশনও তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
এমআই