শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর, এবার পূরণ হবে কি বিচারের আশ্বাস?

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২৫
সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর, এবার পূরণ হবে কি বিচারের আশ্বাস?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ১৩ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনের রহস্য উন্মোচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ১৩ বছরেও কূলকিনারা হয়নি এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের। কারা জড়িত এই হত্যার সঙ্গে সেই রহস্যই আজও উন্মোচিত হয়নি। মামলার অগ্রগতিও হতাশাজনক।

টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতা ধরে রাখা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে সেই সরকার যে আন্তরিক ছিল না সেটা স্পষ্ট। সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার ইঙ্গিতও মিলেছে বারবার। এবার যখন সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর পূর্তি হচ্ছে তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন। ইতোমধ্যে সেই সরকারের পতন হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে। এবার কি তাহলে পূরণ হবে সাংবাদিক দম্পতি হত্যার বিচার পাওয়ার আশা? তাদের পরিবার কি দেখতে খুনিদের শাস্তি?

বর্তমানে শক্তিশালী তদন্ত সংস্থা পিবিআই তদন্ত করছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জেনেছি। আমরা কিছুটা আশাবাদী। তবে রহস্য উদ্‌ঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছি না।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরে বাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। আলোচিত এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পিছিয়েছে শতাধিক বার। বিচারের দাবিতে এখনো তার পরিবার ঘুরছে আদালতের বারান্দায়।

২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব। পরে বিভিন্ন সময়ে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করে। রুনির সঙ্গে মোবাইল ফোনে তানভীরের কথা বলার সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাদের মধ্যে তানভীর, নিরাপত্তা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, নিরাপত্তাকর্মী রুদ্র পাল ও মিন্টু জামিনে মুক্ত আছেন।

হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগরের হাত বাঁধা ওড়না ও রুনির পরনের কাপড় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছিল র‍্যাব। পাশাপাশি সাগর-রুনির ভাড়া বাসার ভাঙা গ্রিলের অংশ, ঘটনাস্থলে পাওয়া চুল, ভাঙা গ্রিলের পাশে পাওয়া মোজা, দরজার লক, দরজার চেইন ও ছিটকিনির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেখানে পাঠানো হয়। হত্যায় সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনাও যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। পরে এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন র‍্যাবের কাছে আসে। হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১৬০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব; কিন্তু খুনি শনাক্তের জন্য কার্যকর (ক্লু) সূত্র পায়নি।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হাইকোর্টের নির্দেশে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত নতুন মোড় পায়। গেল নভেম্বর থেকে পিবিআইপ্রধানের নেতৃত্বে কাজ করছে টাস্কফোর্স। তবে মামলার উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি।  

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত আইজিপি মোস্তফা কামাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ১২ বছর যে তদন্ত করা হয়েছে, তাতে তারা কী পেয়েছেন- সেটার রিভিউ করতে হচ্ছে। যারা অতীতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তাদের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে বলে আশা করি।   

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। তবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ায় মামলাটির অনেক আলামত খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। এ ব্যাপারে যেসব দক্ষ কর্মকর্তাদের জড়িত করা হয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের ভালো ট্র্যাক রেকর্ড আছে। সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। বাকিটা নির্ভর করছে ডিএনএ পরীক্ষাসহ কিছু প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণের ওপর। সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। পিবিআই কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গেও কথা বলছেন। আমরা আশা করছি, তারা ফলপ্রসূ কিছু বের করতে পারবেন।

মামলার বাদী ও নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বিচারের দাবি জানাতে জানাতে ক্লান্ত। অনেকটা হতাশার সুরে তিনি বলেন, এত বছরে কিছু হয়নি। বর্তমানে শক্তিশালী তদন্ত সংস্থা পিবিআই তদন্ত করছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জেনেছি। আমরা কিছুটা আশাবাদী। তবে রহস্য উদ্‌ঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছি না।

সাগর-রুনির সেই সময়ের শিশুপুত্র মেঘ আজ প্রাপ্ত বয়স্ক। বাবা-মা হারানোর কষ্ট বুকে চেপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও হতাশ বিচারকাজ নিয়ে। তবে আশা করেন, জীবদ্দশায় তার বাবা-মায়ের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবেন।

সাগরের মা সালেহা মনির আক্ষেপের সুরে বলেন, আমার সাগরকে কেন মারা হলো? কারা মেরেছে? এই টুকু দেখে যেতে চাই। ছেলের কবরস্থানে এখনো যাইনি। রুনির মা তো চলে গেছে। এখন আমি একা আছি। আল্লাহর দিকে চেয়ে আছি। আশা করি, ইউনূস সরকারের আমলে সঠিকভাবে তদন্ত হবে। তারা আমার সাগরের খুনিদের বের করবে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল