নিজস্ব প্রতিবেদক:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের প্রস্তাব দিয়েছেন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক দাবি করেন তারা। এ সময় জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য দলটির নেতাদের বিচারের বিষয়েও আলোচনার কথা জানান তারা।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যে নৌকা ডুবে গিয়েছে, তা আর ভাসবে না। সবাই একমত, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ অপ্রাসঙ্গিক। আইনি প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে সবাই একমত। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চাই।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘জুলাই চার্টারকে আইনি প্রক্রিয়া আনার কথা বলেছি। নতুন সংবিধানের কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের বিচার ইস্যুতে কথা হয়েছে। গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান করার দাবি জানানো হয়েছে।’
আওয়ামী লীগকে সরকারিভাবে টেরোরিস্ট ঘোষণা ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেছেন জানিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। তারা গত সবকটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করেছে। বিশেষ করে তারা গত জুলাই-আগস্টে নজিরবিহীন গণহত্যা চালিয়েছে। তাই দলটি এখন দেশের মানুষের কাছে টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি যেন সরকারিভাবে আওয়ামী লীগকে টেরোরিস্ট ঘোষণা করা হয়, সেইসঙ্গে তাদের রাজনীতি যেন নিষিদ্ধ করা হয়।
ববি হাজ্জাজ বলেন, আজকের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। জাতীয় নির্বাচন কখন, কীভাবে হবে তা তুলে ধরেছি। তবে তার আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা দেখতে চাই বলে জানিয়েছি।
awami-1বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হালদার, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, গণ ফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতারাও বৈঠকে ছিলেন।
তবে আওয়ামী লীগের জোটে থাকা কোনো দল ও জাতীয় পার্টিকে বৈঠকে ডাকা হয়নি।
গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহসভাপতি করা হয়েছে।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বৈঠকে কমিশন আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশগুলো বিবেচনা করবে। এ ছাড়া কমিশন জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
এমআই