জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিএনপির উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় জেলার ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত এই জনসভায় বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেন।
এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, যিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আব্দুল খালেক এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব সাইফুর রহমান রানা। সভাটি সঞ্চালনা করেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, এবং সভাপতিত্ব করেন কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
জনসভায় বক্তারা দেশের চলমান সংকট এবং সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেন। তারা অভিযোগ করেন যে, বর্তমান সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা আরও বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
প্রধান বক্তা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, "দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, আইনের শাসন অনুপস্থিত, আর স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা চক্রান্ত করছে। কিন্তু জনগণ রাস্তায় নেমেছে, তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করবেই।"
প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, "স্বাধীনতার চেতনা রক্ষায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশকে এই দুঃশাসন থেকে মুক্ত করা সম্ভব। জনগণের ঐক্যই পারে এই স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে।"
বক্তারা অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান এবং বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে হলে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন দেওয়া জরুরি। তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার জনগণের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
জনসভায় বক্তারা ফ্যাসিবাদী শক্তির চক্রান্ত মোকাবিলায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, "দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষায় সবাইকে রাজপথে থাকতে হবে।"
জনসভায় উপস্থিত বিএনপির নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যতে আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা দেন। তারা বলেন, সাধারণ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দলীয় কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। বক্তারা বলেন, "এই সংগ্রাম শুধু বিএনপির নয়, এটি সমগ্র জনগণের। সরকার যদি আমাদের দাবি না মানে, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।"
বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের উপস্থিতিতে এই জনসভা এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সমাবেশে পরিণত হয়। সমাপ্তি বক্তব্যে বক্তারা জনগণের দাবি আদায়ের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এই জনসভা কুড়িগ্রামসহ সারা দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এম আই