দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
ঘর বসবাসের অযোগ্য। হোগলার বেড়া খুলে পড়ার মত অবস্থা। আঠা দিয়ে পত্রিকার পাতা লাগিয়ে খুলে পড়া বেড়া কোন রকমে ধরে রাখা হয়েছে। শীত, বর্ষা ও গ্রীষ্মে এ ঘরে বসবাস করা যায় না । তবুও জরাজীর্ন ঘরেই পক্ষাঘাতগ্রস্থ (প্যারালাইজড) বৃদ্ধ বাবা ও বোনকে নিয়ে বসবাস করেন জুই মন্ডল (৩৫)। অন্যের জমিতে কাজ করে ও কয়েকটি হাঁস পালন করেই চলে তাদের সংসার। যা উপার্জন হয় তাই দিয়ে বাবার ঔষধের টাকাই জোগার হয় না। তাই অর্ধাহারে অনাহারে দিনপার করছে তারা।
স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জেনে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের লেবুতলা গ্রামে।
ডুমুরিয়া গ্রামের বিথী ঘরামী বলেন, প্রতিবেশি গৌরদাস মন্ডলের স্ত্রী ও ৭ মেয়েকে নিয়ে সংসার। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ৫ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখনো অবিবাহিত রয়েছে ২ মেয়ে। প্রায় ৮ বছর আগে তিনি স্ট্রোক জনিত প্যারালাইজডে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে তার বয়স ৭০ বছর। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত আয়ের পথ । নিজেদের জায়গায় একটি ঘর থাকলেও সেটি বসবাসের অযোগ্য। বৃষ্টি বর্ষায় পাশের বাড়ি আশ্রয় নিতে হয়। এদিকে দুই মেয়ে জুই মন্ডল (৩৫) ও শংকরী মন্ডল (৩০) বিবাহযোগ্য। তারা কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারে না। দুই বোন অন্যের জমিতে ধানের চারা উঠিয়ে ও কয়েকটি হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু সেই উপার্জন দিয়ে বাবার ওষুধের টাকায় জোগাড় করতে পারে না। কোনরকমে শাক-সবজি পান্তা খেয়েই দিন পার করেন তারা।
এসব বিষয় স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরে হতদরিদ্র ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মঈনুল হক।
তাদের স্বাবলম্বী করতে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাঁস কিনতে নগদ ২০ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল, একটি সেলাই মেশিন ও পাঁচটি কম্বল। এছাড়া দ্রæত ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেশি শ্যামল ঘরামী বলেন, দুই বোন জুই ও শংকরীর জীবনে পূজা পার্বন সহ কোন আনন্দের দিন নেই। কারণ তারা কখনোই একটা নতুন জামা কিনতে পারে না। বাবার ঔষধ কিনতেই সব টাকা চলে যায় তারপরও তারা কোন রকমে দিন পার করে। তাদের দুঃখের কথা শুনে ইউএনও স্যার নিজে বাড়ি এসে অনেক সাহায্য করেছেন।
আরেক প্রতিবেশী লক্ষী মন্ডল বলেন, ভাঙা ঘরের সাথে তারা নিজেরা ঠিকমতো খেতেই পারে না। বিবাহযোগ্য হওয়ার পরও তারা বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে বাবার সেবা করে চলেছেন। ওরা কতদিন যে মাছ মাংস খায়না তার কোন ঠিক নেই। প্রতিদিন সকালে দেখি ভাতে পানি দিয়ে কাঁচামরিচ দিয়ে ভাত খায়। আর দুপুরে আর রাতেও হয় কাঁচামরিচ ভাত অথবা শাকসবজি দিয়েই খেতে হয়। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনে প্রশাসন তাদের সহায়তা করেছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমরান শেখ বলেন, আমরা কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে একটি ভাঙাচোরা ঘর দেখতে পাই। তখন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তাদের কথা জানতে পারি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি অসহায় ওই পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল হক বলেন, স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাদের দুঃখ দূর্দশার কথা শুনে তাদের বাড়িতে যাই। তখন দেখতে পাই আসলেই তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। পরে ২০ হাজার টাকা, একটি সেলাই মেশিন, ৩০ কেজি চাল ও কয়েকটি কম্বল দিয়েছি। এছাড়া খুব শীঘ্রই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবে।