খাদিজা খানম, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: ২০২০ সালে টানা ৭৬ দিন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে সকল প্রকার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন শিক্ষকরা। দীর্ঘদিন একাডেমীক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পরবর্তীতে পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও তার কোন বাস্তব রুপ ঘটেনি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরোপিত নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবীতে গত ১ অক্টোবর থেকে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরবর্তীতে উচ্চ মহলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতিতে শিক্ষকরা একাডেমীক কার্যক্রমে ফিরেন। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষকরা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ায় ১৮ মার্চ, ২০২০ থেকে বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরপর একাডেমীক কার্যক্রম সচল রাখতে ২০২০ সালের ২৫ জুন অনলাইন শ্রেণী কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি। সে মোতাবেক ৩০ জুন, ২০২০ থেকে নোবিপ্রবিতেও শুরু হয় অনলাইন শ্রেণী কার্যক্রম। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনে অনলাইন ক্লাস থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের মতে, শিক্ষকদের এই আন্দোলনের কারণে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইন শ্রেণী কার্যক্রমের মাধ্যমে এগিয়ে গেলেও নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে। তাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও তা পুষিয়ে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিশকাত বলেন, করোনার কারণে মাস্টার্স ২ বছরেও শেষ করতে পারিনি। জব করতাম জবটাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। গত ফেব্রুয়ারিতে এক্সাম হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। এখন আমি জবলেস, হতাশা কাজ করে অনেক।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত মুনা বলেন, আমরা একটি বড় ধরনের দূর্যোগের মধ্যে আছি। কবে পৃথিবী সুস্থ হবে আমরা জানিনা। আমাদের উচিত সুবিধাজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়া। পরীক্ষাসহ সকল জটিলতায় শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়া। এ ব্যাপার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরো দায়িত্বশীল আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি। প্রশাসনের গাফিলতির জন্য শিক্ষর্থীদের পিছিয়ে দেওয়া মোটেই কাম্য নয়।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হাকিম বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস পরীক্ষার ব্যাঘাত ঘটানোকে শিক্ষকরা অমার্জিত এবং একাডেমিসিয়ানদের আন্দোলনের আচরণবিধি লঙ্ঘন বলতে পারেন। তাহলে আমি শিক্ষকদের এই দাবি আদায়ের পদ্ধতিকে ইতিবাচক বলতে পারি না। এতে আমরা শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছি অনেক। ফলাফল না ভেবে পদক্ষেপ নেয়া হলে সেটা পূর্ণ করার দায়িত্ব শিক্ষকদেরই। যেখানে করোনা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে সেখানে এটাকে একটা বাড়তি চাপ বলে বিবেচনা করা যায়। শুধু আশা দেয়ায় সীমাবদ্ধ না থেকে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবা উচিত শিক্ষকদের।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শান্ত বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষকদের শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই। উনাদের কথা, সমস্ত আদেশ-উপদেশ গুরু-ছাত্রের মত করে মানতে চাই। কোনভাবেই এটা কাম্য নয় যে, উনারা আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মত প্রতিশ্রুতি দিবে। যেই প্রতিশ্রুতি উনারা রক্ষা করতে পারবেন না সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরো বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন দরকার আছে বলে মনে করি না। এখন যেভাবে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য ভাবছেন সেভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে কার্যত ৭৬ দিনের কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া সম্ভব না। আর ক্ষতি পুষিয়ে দেবার নামে এমন কিছু উদ্যোগ যাতে না নেয়া হয় যা শিক্ষার্থীদের উপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
কিভাবো ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। আটকে থাকা সেমিস্টারের পরীক্ষাগুলো পর্যায়ক্রমে দ্রুত শেষ করা হবে এবং নতুন সেমিস্টারগুলোও দ্রুত শেষ করে দেয়া হবে।
সময় জার্নাল/এমআই