শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের চিরায়ত প্রেম

বৃহস্পতিবার, জুলাই ১, ২০২১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের চিরায়ত প্রেম

মেহেরুজ্জামান সেফু: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে ঢাবি) নীতিবাক্য সত্যের জয় সুনিশ্চিত। স্লোগান শিক্ষাই আলো। ৬০০ একর নগর এলাকার উপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রাঙ্গন অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১২টি ইনস্টিটিউট, ৫৬টি গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র, ২০টি আবাসিক হল ও ৩টি ছাত্রাবাস, এবং ৭টি স্নাতক পর্যায়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজসহ মোট ১০৫টি অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে। ১৯২১ সালের আজকের এই দিনে ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বর্ষ পূর্তিতে সাবেক শিক্ষার্থীরা গর্বের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো রঙ্গিন দিনগুলোকে চিরায়ত প্রেমে প্রকাশ করেছেন। প্রকাশ করেছেন অতুলনীয়,জীবনকে বদলে দেবার অন্যতম বিদ্যাপীঠ বলে। আর সে বিশ্ববিদ্যালকে র‍্যাংকিং দিয়ে বিচার করাটা অযৌক্তিক বলে দাবি বর্তমান শিক্ষার্থীদের। প্রত্যাশা সকল শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিতের সাপেক্ষে একটি পরিপূর্ণ জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনুভূতি নিয়ে লিখেছেন মেহেরুজ্জামান সেফু।

নাসিরুদ্দীন তুসী (২২তম বিসিএস, সাধারণ শিক্ষা) সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি হরগঙ্গা কলেজ, মুন্সিগঞ্জ

কবি ও লেখক, UNICEF প্রদত্ত "Meena media award" প্রাপ্ত নাসিরুদ্দীন তুসী বলেন,  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ শতজন্মদিন! আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গৌরবান্বিত এই ভেবে যে,আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ১৯৯১-৯২ সেশনে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে। কবি জসীমউদদীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। পরম শ্রদ্ধাভাজন  শিক্ষক মন্ডলী ও প্রিয় সতীর্থদের স্মৃতি আজও অমলিন। সেইসব দিনগুলো ছিল স্বপ্ন রঙিন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের চিরায়ত প্রেম।  ভাষা আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধে, বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান হিরণময়। শুভ জন্মদিন,প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়! তোমার অবদান হোক চির অক্ষয়!

নাওশিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, প্রভাষক-ঢাকা কলেজ (৩৩ তম বিসিএস)

তিনি জানান, যদি খুব ছোট করে বলতে হয় তাহলে এটু বলবো এই ঐতিহ্যের একজন অংশীদার হতে পেরে অনেক ভাগ্যবান মনে করি নিজেকে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি বিদ্যাপিঠ যেখানে আমার নানু থেকে শুরু করে আমার বাবা , ভাই সবাই এখানের ছাত্র । এটা একটা অনুভূতির জায়গা। বলে বোঝানো যাবে না….।

জনপ্রিয় রেডিও এবং টিভি উপস্থাপক আরজে নিরব

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা শিক্ষার্থীর জীবন বদলে দেয়। অন্য কোথাও পড়াশোনা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা আকাশপাতাল নয় লক্ষকোটি গুন যোজন দূরত্বের ব্যপার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে একটা মানুষের যে মানসিকতা মননশীলতা বা ধৈর্য মানসিক বিস্তৃতি বাড়ে সেটা কোনো চারদেয়ালে বন্দি ইউনিভার্সিটি গুলোতে সম্ভব না। ঐতিহ্য সবসময় একটা ইস্যু। ঐতিহ্য ইস্যু একারণে যে ঐতিহ্যের কারনেই মানুষ সেরকম হওয়ার চেষ্টা করে। যেটাকে বলে খাটি বাংলায় সংস্কৃতি। বিশ্ববিদ্যালয় তো হচ্ছে নিজেকে বিকশিত করার জায়গা।  আর সেই বিকশিত করবার জন্যে বিশাল আয়তনটা খুব জরুরি কারণ চোখ যত দূরে, যাবে মন ঠিক ততটাই দেখবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে আমার অনেক গর্ব কারণ আমি নিজে একজন শিক্ষক। এবং আমি মনে করি আমার জীবনটা আসলে বদলে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যদি সেখানে কেউ না পড়ে তাহলে আসলে জীবনের অনেক খানি অপূর্ণ থেকে যায় তার। আই এম প্রাউড অফ মাই ইউনিভার্সিটি এন্ড ইউল গো অলওয়েজ।


গোলাম রাব্বী (সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার, সময় টিভি), প্রাক্তন শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

তিনি বলেন, "আজ আমি যা, বলতে গেলে তার শতভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া। এমনভাবে লক্ষ-কোটি বছর বেঁচে থাকুক প্রাণের এবং দেশের শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠ; সেটাই প্রত্যাশা। পাশাপাশি- এটাও ঠিক, ডিজিটাল এবং গ্লোবালাইজেশনের এ যুগে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে হবে সবাইকে।

ওবায়দুর রহমান সোহান, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ, (২০১৭-১৮ সেশন) বলেন,

বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। বহু সুপণ্ডিত জনেরা এখানে অতীতে এবং বর্তমানে পাঠদান করছেন। গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার যে বিষয়টি শতবর্ষে এসে বেশি করে আলোচিত হচ্ছে ছাত্র হিসেবে আমারো তাই-ই চাওয়া। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূয়সী অবদান রেখেছে এবং বর্তমান রাজনৈতিক দাবি দাওয়া আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে জাতির আশার প্রতীকে পরিণত হতে পেরেছে সেই বিশ্ববিদ্যালকে র‍্যাংকিং দিয়ে বিচার করাটা অযৌক্তিক বটে। তবে স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং আমি আশাবাদী, অচিরেই এসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।

মুসলিমা আক্তার(শায়লা), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (২০১৭-১৮ সেশন) বলেন,

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ তম জন্মদিন। শতবর্ষী বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে এটি নিশ্চয়ই গর্বের। আমাদের শতবর্ষের গৌরবের ইতিহাসের পরিধি বিশাল। কিন্তু শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতির জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান খুঁজতে গেলে বারবার দৃষ্টি ফিরে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ জাতির সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশ। কিন্তু দীর্ঘ ১০০ বছরে আমরা কি করতে পেরেছি সেই হিসাব কষতে হবে। বাংলা ভাষা এবং বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়?  কতজন গুণিজন সৃষ্টি করছে প্রতিবছর যারা সমৃদ্ধ করছে মানবসমাজকে। বরং আমরা দেখছি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা ভাষা লুপ্ত হতে চলেছে। আর গুণিজন! সে তো অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজে  পাওয়া যায়না। তাই ১০০ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বলতে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঠিক ট্র্যাকে নেই। এর অনেকগুলো কারণ আছে। সরকারি অবহেলা, শিক্ষকদের হীন মানসিকতা, নোংরা শিক্ষক রাজনীতি, নোংরা ছাত্র রাজনীতি। এগুলো থেকে সৃষ্ট অসংখ্য জীবাণু কিলবিল করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ চিকিৎসাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে আমার প্রত্যাশা।

তাসনুভা জাহান লামিয়া, ভাষা বিজ্ঞান বিভাগ (২০১৬-১৭ সেশন) বলেন

বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান বিকাশের এমন এক জায়গা যেখানে সকল শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত সুযোগ পাবে। ঢাবির শতবর্ষে আমরা চাই এর গবেষণার ক্ষেত্র সহজলভ্য হোক। বাজেট বাড়ুক এ খাতে। সকল শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি হলগুলো দখলদারিত মুক্ত করা সময়ের দাবি। হলের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন হল স্থাপন, বিভাগসমূহের বিশেষত কলাভবনের সংস্কার, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু, লাইব্রেরি বর্ধিতকরণ ও বইয়ের সংগ্রহ বাড়ানো, ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট একটি দলের আধিপত্য রোধ ইত্যাদি বাস্তবায়িত হোক এটাই আমরা চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস দখলমুক্তকরণ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত, শিক্ষক নিয়োগসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতিসহ সকল অনিয়ম রোধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচন চাই আমরা। ঢাবির শতবর্ষে এসে আমাদের প্রত্যাশা, সকল শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিতের সাপেক্ষে একটি পরিপূর্ণ জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র হয়ে উঠুক আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আনিসুর রহমানের, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ ( ২০১৭-১৮ সেশন) বলেন,

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে শুরু করে দেশের গনতান্ত্রিক অধিকারের সূতিকাগার হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকাই না, আরোও একটি বড় বিষয় হচ্ছে জ্ঞান চর্চা এবং গবেষণার বিষয়টি বিবেচনা করা। সে অবস্থান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যে ধরনের গুরুত্ব পেতো তা এই বর্তমান সময়ে ফিকে হয়ে এসেছে। তবে, আমার বিশ্বাস আমাদের প্রাণের বিশ্বিবদ্যালয়টি সে যায়গাটিতে ফিরে যেতেও খুব বেশি সময় লাগবে না।  

সময় জার্নাল/এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল