জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠভাজনদের একজন তিনি। তার ক্ষমতার দাপটের কাছে সবাই ছিল কোণঠাসা। নানা সময় বড় বড় অপকর্ম করেও তিনি পার পেয়েছেন আওয়ামী লীগের জোরে। বলা হয়ে থাকে, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি আশীর্বাদ ছিল তার ওপর। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এই ইমরান হোসেনকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারের পর সেই ইমরান হোসেনের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেছে পুলিশের তদন্ত সংস্থা সিআইডি।
১৩৩ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলায় ইমরান হোসেনকে গতকাল সোমবার (৩ মার্চ) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সম্পর্কের জানাতে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তদন্ত সংস্থাটির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি একরামুল হাবিব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ জাতের গরু ব্রামহা আমদানি করে বিক্রি করতেন। যা ছিল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ আইনে বেআইনি ও আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু এরপরও তিনি তা করতেন। বিষয়টি বিভিন্ন সময় আলোচনায় এলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিআইডির পক্ষ থেকে তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ১৩৩ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য পেলেও ৮৬ লাখ টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডি বলছে, ইমরান হোসেন (৪৩) ও তার সহযোগী তৌহিদুল আলম জেনিথ (৪৫) চোরাচালান, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করতেন। সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বিদেশে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা পাচার করেছেন।
যেভাবে আনা হতো ব্রামহা জাতের গরু
সিআইডির ডিআইজি একরামুল হাবিব জানান, তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা নিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ বাংলাদেশে আনতেন। এছাড়া ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইমরান হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু ছাগলকে বিদেশি ও বংশীয় গরু/ছাগল বলে প্রচার করে উচ্চমূল্যে তা কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করতেন। এভাবে অবৈধভাবে আয় করে প্রায় ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ঢাকা কাস্টমস হাউজের আটককৃত এবং কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার, সাভারে থাকা ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জবাই করে ন্যায্যমূল্যে মাংস বিক্রয়ের কথা থাকলেও জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্রে সেগুলো জবাই দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে তা জবাই না করে গরুগুলো কৌশলে হাতিয়ে নেন ইমরান। যা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। আর এই ব্রামহা আমদানির নামে ১২১ কোটি ৩২ লাখ ৯১ হাজার টাকা ইমরানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করে লন্ডারকৃত সম্পদে রূপান্তর করেছেন।
এছাড়াও মোহাম্মদপুর থানা, ঢাকার বেড়িবাঁধ এলাকায় রামচন্দ্রপুর সরকারি খাল ভরাট ও জবর দখল করে সাদিক এগ্রোর মালিক মো. ইমরান হোসেন তার অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
এদিকে ইমরান হোসেনকে আদালতে তোলা হলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম. এ আজহারুল ইসলামের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।