সর্বোত্তম প্রোটিনের উৎস ডিম,এরকমটাই আমরা জেনে এসেছি।তবে ডিমে থাকা পুষ্টি উপাদান যেমনঃওমেগা থ্রি,ফলিক এসিড,ভিটামিন-ই কি আমাদের জন্য আসলেই উপকারী? চলুন সত্যতা যাচাই করে দেখা যাক।
ওমেগা থ্রি কি?
ওমেগা থ্রি হলো একধরনের অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড।এর অপর নাম লিনোলেইক এসিড।যা আমাদের দেহ উৎপাদন করতে পারেনা।এবং খাদ্যের মাধ্যমে আমরা গ্রহন করে থাকি।খাদ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা থ্রি হলো এইকোসাপেন্টানয়িক এসিড(EPA) ও ডোকোহেক্সানয়িক এসিড(DHA) মাছ,ডিম,সামুদ্রিক মাছ,বাদাম(বিশেষ করে কাঠবাদাম),শাকসব্জির তেল ইত্যাদি থেকে ওমেগা থ্রি পাওয়া যায়।ওমেগা থ্রি হৃদরোগের ঝুঁকি,গাঁটের ব্যথা,চর্মরোগ কমাতে ও ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে।
ফলিক এসিড কি?
ফলিক এসিড হলো ভিটামিন বি৯ এর সংশ্লেষিক রুপ।এর প্রাকৃতিক রুপকে সাধারনত ফলেট বলা হয়।এটি টেরোইগ্লুটামিক এসিড নামেও পরিচিত।যা আমাদের দেহ উৎপাদনে অক্ষম।এটি পরিপূরক খাদ্য হিসেবে প্রক্রিয়াজাতকরন খাদ্যে ব্যবহার করা হয়।ডিম,কলিজা,গাঢ় সবুজ রঙের সব্জি,শীম ইত্যাদিতে ফলিক এসিড পাওয়া যায়।এটি ডিএনএ এবং আরএনএ গঠনে ও প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে।
ভিটামিন ই কি?
ভিটামিন ই একধরনের চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন।এর অনেক রকম প্রকৃতি থাকলেও শুধুমাত্র আলফা টকোফেরল মানবদেহে ব্যবহৃত হয় এবং তা আমাদের দেহে উৎপন্ন হয়না।এটি বাদাম,বীজ,ডিম,বিভিন্ন ফল ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।এটি মুলত এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকারক ফ্রি-র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে।এছাড়াও অনাক্রম্যতা রক্ষা ও হ্রদপিণ্ডে রক্ত তঞ্চন রোধে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখে।
ডিমে এদের পরিমান কতটুকু?
১০০গ্রাম ডিমে
ওমেগা ৩ রয়েছে 1.82 গ্রাম,
ফলিক এসিড রয়েছে ৭১ মাইক্রো গ্রাম ও
ভিটামিন ই রয়েছে ০.১০৫ গ্রাম।
দেহে প্রয়োজনীয় মাত্রা কতটুকুঃ
ওমেগা থ্রি - মহিলাদের ক্ষেত্রে ১.১গ্রাম এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ১.৬গ্রাম প্রতিদিন
ফলিক এসিড - গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন-ই - ১৫মিলিগ্রাম
দেহে এদের গুরুত্ব কি কি?
ওমেগা থ্রিঃ
১/ওমেগা থ্রি আমাদের দেহকোষ প্রাচীর গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান।
২/ত্বকের হাইড্রেশন রক্ষায় ও ত্বকের উপরিভাগে বিভিন্ন প্রদাহ রোধ করার পাশাপাশি ত্বকের তারুন্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে।
৩/ চোখের রেটিনার গাঠনিক একক ডোকোহেক্সানয়িক এসিডের মূল উপাদান হলো ওমেগা থ্রি। ৪/রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ,রক্তের প্রদাহ কমাতেও ওমেগা থ্রি বহুল আলোচিত।
৫/দেহের স্নায়ুবিক উদ্দীপনা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ন উপাদান এইকোসানয়েড ্তৈরীতেও ওমেগা থ্রি এর ভূমিকা রয়েছে।
৬/প্রোস্টেট ক্যান্সার,ব্রেস্ট ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে।
৭/যকৃতের ফ্যাটি লিভার কমিয়ে আনে, যা যকৃতে লিভার-সিরোসিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনে।
ফলিক এসিডঃ
১/রক্তের লোহিত কণিকা উৎপন্ন করে ও ডিএনএ সংশ্লেষ করতে সক্ষম।
২/গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের সঠিক বিকাশের পাশাপাশি গর্ভকালীন জটিলতা রোধ করে।
৩/মস্তিষ্কের সঠিক পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সুষ্ঠু জ্ঞানীয় বিকাশ ঘটায়।
৪/মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার উৎপন্ন করে, যা এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট হিসেবে কাজ করে।
৫/রক্তে হোমোসিস্টেইনের মাত্রা কমিয়ে আনে,যা হৃদযন্ত্র ও কিডনীর নেতিবাচক ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
ভিটামিন-ইঃ
১/ভিটামিন ই তে উপস্থিত এন্টি-অক্সিডেণ্ট পরিবেশের ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
২/রক্তের এলডিএল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, অত্যাধিক ব্লাড প্রেসার ,হার্ট অ্যাটাক,হার্ট ফেইলিওর এর মতো মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করে।
৩/ডিসমোনোরিয়া বা পিরিয়ডজনিত ব্যথা নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪/যকৃতের ফ্যাটি লিভার নিরাময়ে অংশগ্রহন করে।
অপর্যাপ্তায় দেহে কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
ওমেগা থ্রিঃ
১/ ত্বকের প্রদাহ বা শুষ্কতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি তা একজেমা পর্যায়েও চলে যেতে পারে।
২/চোখের শুষ্কতা বা চোখের পানি শূন্যতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩/হাঁটু বা গিটে ব্যথার উপসর্গ দেখা যেতে পারে, যা অস্টিওআর্থ্রাইটিস নামে বহুল প্রচলিত।
৪/ওমেগা থ্রি এর অভাব ডিপ্রেশনের মতো মানসিক রোগেরও জন্ম দিতে পারে।এছাড়াও ডিমেনশিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের আশঙ্কা থাকে বেশ।
ফলিক এসিডঃ
১/অ্যানেমিয়া বা রক্তস্বল্পতা,বহুল পরিচিত একটি রোগ ফলিক এসিডের অভাবে হয়ে থাকে।কেননা ফলিক এসিডের অভাবে লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্নের হার অনেকাংশে কমে আসে।
২/গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের মস্তিষ্ক ও মেরুনণ্ডের সঠিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৩/ভূমিষ্ঠ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং প্রতিবন্ধকতার জন্ম দিতে পারে।
ভিটামিন-ইঃ
১/শিশুদের পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে;ফলে হাটা-চলা,প্রতিক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হয়।
২/ত্বক ও চোখের শুষ্কতা দেখা দেয়।
৩/অতিরিক্ত অভাবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো মরণব্যাধিও হতে পারে।
যেহেতু ওমেগা থ্রি,ফলিক এসিড এবং ভিটামিন-ই আমাদের দেহের অনুপস্থিত অপরিহার্যক;অর্থাৎ আমাদের দেহের জন্য এগুলো অত্যাবশ্যক পুষ্টি উপাদান তবে দেহ দ্বারা উৎপন্ন হয়না এবং খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়।এই উপাদানগুলো আমাদের সুষ্ঠু দেহ গঠনে নানাবিধভাবে অংশগ্রহন করে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদেহ গঠনে এদের অবদান অতুলনীয়। ডিম এই ৩টি উপাদানেরই একটি অতুলনীয় যোগানদারী খাদ্য।কেননা ডিমে এদের প্রত্যেকটির পর্যাপ্ত পরিমান বিদ্যমান।তাই আমরা ডিমকে এই তিনটি পুষ্টি উপাদানের আদর্শ হিসেবে গ্রহন করতে পারি।এবং যেহেতু ওমেগা থ্রি,ফলিক এসিড এবং ভিটামিন-ই এর অভাব আমাদের দেহে মারাত্নক ও জটিল বেশ কয়েকটি ক্ষতি সাধন করে, তাই এদের অগ্রাহ্য করা উচিত নয়।
Jannatul Ferdous (Rayta)
3rd year Student, Dept Food and Nutrition
Govt. College of Applied Human Science