নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারাদেশে হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের প্রতিবাদে ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে ডাকা গণমিছিলের কর্মসূচি থেকে পিছু হটল বাম সংগঠনগুলো। ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীদের আলটিমেটামের পর বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানায় সংগঠনগুলো। শনিবার (১৫ মার্চ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এই মিছিল হওয়ার কথা ছিল।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনে এদিন বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছিলেন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এখান থেকে গণমিছিল নিয়ে টিএসসি যাওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে ইনকিলাব মঞ্চ শহীদ মিনার থেকে তাদের সরে যেতে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধায় শহীদ মিনারের দিকে যেতে না পারলেও শহীদ মিনারের জমায়েত থেকে নিজেদের কর্মসূচি স্থগিত করে বাম সংগঠনগুলো।
শহীদ মিনারের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল শহীদ মিনার থেকে টিএসসি পর্যন্ত। সেই গণমিছিল স্থগিত করে এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি। এসময় সাত দফা দাবি তুলে ধরেন বক্তারা।
সাত দফা দাবি হলো– দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নিপীড়ন ও হত্যার বিচার করতে হবে; স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টকে অপসারণ করতে হবে; জুলাই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে; মন্দির-মসজিদ, মাজারে হামলাকারীদের বিচার করতে হবে; চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচার করতে হবে; সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়াসহ আওয়ামী আমলের সব হত্যার বিচার করতে হবে এবং হিন্দু ও আদিবাসীদের ওপর হামলা ও লুটতরাজের বিচার করতে হবে।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ‘আমরা খুব আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে লাখ লাখ নারী অংশ নিয়েছিল একটাই উদ্দেশ্যে। সেটা হলো, বৈষম্যহীনভাবে নারীর পথচলাকে সহজ করা এবং নারীর ওপর যত ধরনের সামাজিক বৈষম্য আছে সেগুলোকে বিলোপ করা, শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্যকে বিলোপ করা।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পরে সেই নারীদেরই লাঞ্চিত হতে হচ্ছে। একটা মহল আমার ওড়না ঠিক আছে কিনা, ঠিকমতো হাঁটছি কিনা, কী খেতে পারবো, কীভাবে চলবো সবকিছুই যেন নির্ধারণ করে দিচ্ছে। নারীদের তারা মানুষ হিসেবে নয়, জড়বস্তু বা পণ্য হিসেবে দেখতে চান। আর তার বিরুদ্ধেই আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি।’
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, ‘আমরা এই কর্মসূচি ঘোষণা করার পর একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী আমাদের কর্মসূচি নস্যাৎ করার, আমাদের এই ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য নানা চক্রান্ত করছে। আমরা এটাও লক্ষ করছি, আমাদের এই ধর্ষণবিরোধী গণ-আন্দোলনকে পুঁজি করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরাও পুনর্বাসনের স্বপ্ন দেখছে। আমরা উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হুঁশিয়ারি করে বলতে চাই, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে আপনাদের যে বাসনা; বাংলাদেশের ছাত্র, যুব সমাজ সেটি পূরণ হতে দেবে না।’
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল), পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।