মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে আপনি হাঁপিয়ে যান কেন ?

সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে আপনি হাঁপিয়ে যান কেন ?

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় অনেক মানুষ দ্রুত হাঁপিয়ে যায়, যা শারীরিক সক্ষমতা ও শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থার কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে। এই পরিস্থিতির পেছনে বেশ কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় এবং জীবনধারা-সংক্রান্ত কারণ রয়েছে। 

১. শক্তির চাহিদা ও অক্সিজেন গ্রহণ
সিঁড়ি বেয়ে ওঠা একটি উচ্চমাত্রার শারীরিক কার্যক্রম। হাঁটার চেয়ে এটি অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করে, কারণ এতে শরীরকে তার স্বাভাবিক মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করতে হয়।
▶ অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি
শরীরের পেশিগুলো যখন বেশি কাজ করে, তখন সেগুলোর বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। আমাদের হৃৎপিণ্ড দ্রুত রক্ত প্রবাহিত করে এবং ফুসফুস বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করে এই চাহিদা পূরণের জন্য। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার দ্রুত বেড়ে যায় এবং আমরা হাঁপিয়ে যাই।
▶ এনার্জি প্রোডাকশন ও মেটাবলিজম
আমাদের দেহ প্রধানত অ্যারোবিক (অক্সিজেননির্ভর) এবং অ্যানারোবিক (অক্সিজেনবিহীন) উপায়ে শক্তি উৎপাদন করে। দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ফলে দেহ কখনো কখনো অ্যারোবিক উপায়ে পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারে না এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা পেশির ক্লান্তি ও হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

 ২. ফিটনেস ও শারীরিক সক্ষমতা
সাধারণত শারীরিকভাবে ফিট ব্যক্তিরা কম হাঁপান। কারণ তাদের হার্ট ও ফুসফুস শক্তিশালী থাকে এবং কার্যকরভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।
▶ কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস
যাদের হৃদযন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্র উন্নত, তারা কম হাঁপান। কারণ তাদের দেহ দ্রুত অক্সিজেন গ্রহণ ও সরবরাহ করতে পারে। যাদের ফিটনেস কম, তাদের শরীর অক্সিজেনের ঘাটতি অনুভব করে, ফলে তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যায়।
▶ পেশিশক্তি ও সহনশীলতা
দুর্বল পেশি হলে বেশি শক্তি ব্যয় হয়, যা ক্লান্তির অন্যতম কারণ। যাদের নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস নেই, তারা সহজেই হাঁপিয়ে যান। কারণ তাদের পেশিগুলো কম কার্যকরভাবে শক্তি ব্যবহার করে।

 ৩. অতিরিক্ত ওজন ও শরীরের গঠন
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন থাকলে শরীরকে বেশি ওজন বহন করতে হয়, যা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
▶ শরীরের অতিরিক্ত ওজন
যদি একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত ওজনের হন, তবে তার পায়ের পেশিগুলোর ওপর বেশি চাপ পড়ে এবং হৃৎপিণ্ডকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফলে দেহ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং হাঁপিয়ে যায়।
▶ চর্বির বিপাকীয় প্রভাব
চর্বিযুক্ত দেহে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা দেহের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয় এবং হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হয়।

 ৪. শ্বাসতন্ত্র ও হার্টের সমস্যা
যাদের শ্বাসতন্ত্র বা হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা সাধারণত দ্রুত হাঁপিয়ে যান। কারণ তাদের দেহ যথাযথভাবে অক্সিজেন গ্রহণ ও সরবরাহ করতে পারে না।
▶ অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিস
যাদের অ্যাজমা বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস রয়েছে, তারা শ্বাসনালির সংকোচনের কারণে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারেন না। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় তাদের ফুসফুস পর্যাপ্ত অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে না, ফলে তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।
▶ হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ
যদি কারও হার্ট দুর্বল হয় বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেনযুক্ত রক্ত প্রবাহিত করতে পারে না। ফলে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় দ্রুত হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

 ৫. অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা ও বয়স
শরীরের বয়স ও অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতাও হাঁপিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
▶ বয়স বৃদ্ধির প্রভাব
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পেশিশক্তি, ফুসফুসের কার্যকারিতা ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে বেশি বয়সীদের মধ্যে হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
▶ অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা
যাদের VO2 max (অক্সিজেন গ্রহণের সর্বোচ্চ সক্ষমতা) কম, তারা কম অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেন এবং দ্রুত হাঁপিয়ে যান।

 
৬. জীবনযাপন ও অভ্যাস
আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
▶ অনিয়মিত ব্যায়াম
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাদের কার্ডিওভাসকুলার ফিটনেস কম থাকে এবং তারা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।
▶ ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
ধূমপান ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। তাই ধূমপায়ীরা দ্রুত হাঁপিয়ে যান।

 ৭. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মনস্তাত্ত্বিক কারণেও হাঁপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
▶ উদ্বেগ ও প্যানিক অ্যাটাক
যদি কেউ উদ্বিগ্ন বা স্ট্রেসে থাকেন, তবে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
▶ অতিরিক্ত উত্তেজনা
কখনো কখনো অতিরিক্ত দ্রুতগতিতে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার ফলে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে পারে, যা হাঁপিয়ে যাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।

 সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে যাওয়ার পেছনে মূলত শারীরিক পরিশ্রম, অক্সিজেন গ্রহণের দক্ষতা, ফিটনেস, ওজন, হৃদযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের অবস্থা, জীবনযাত্রার ধরন এবং মানসিক অবস্থার ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ধূমপান এড়িয়ে চললে হাঁপিয়ে যাওয়ার সমস্যা কমানো সম্ভব। যদি কেউ অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হাঁপিয়ে যান, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ দ্রুত হাঁপিয়ে যাওয়া মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

সময় জার্নাল/তানহা আজমী  


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল