জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। বিশ্ববিদ্যালয়টির এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা নিজ ক্যাম্পাস ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ চার বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ দিকে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ভর্তি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য হেল্পডেস্ক, অভিভাবকদের বসার জন্য টেন্ট; প্রক্টরিয়াল বডি, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা, প্রশ্নপত্র ফাস ও প্রক্সিকান্ড এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থা ইতোমধ্যে গ্রহণ করার হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব।
জানা গেছে, এই শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি-পরীক্ষা 'এ', 'বি' ও 'সি' এই তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে সম্পন্ন হব। 'এ' ইউনিটে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদভুক্ত ২৭টি বিভাগসহ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত আছে। 'বি' ইউনিটে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ৬টি বিভাগ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এবং 'সি' ইউনিটে বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২৬টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত আছে। আগামী ১২ এপ্রিল 'বি', ১৯ এপ্রিল 'এ' ও ২৬ এপ্রিল 'সি' ইউনিটের ভর্তি-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ দিকে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, এবং চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিভাগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুর অঞ্চলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও দ্যা মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
কোন কেন্দ্রে কতজন পরীক্ষা দিচ্ছে?
মোট তিন ইউনিটে মিলে রাবি কেন্দ্রে ৭২ হাজার ৩৫ জন; ঢাবি কেন্দ্রে ৮২ হাজার ৭৪১ জন; জবি কেন্দ্রে ১০ হাজার জন; বেরোবিসহ রংপুরের অন্য দুটো ভেন্যুতে ৩৫ হাজার ৬৩০ জন; খুবি কেন্দ্রে ২৩ হাজার ১৮ জন এবং চবি কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৯৯১ জন পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে।
পরীক্ষার সময়সূচি:
ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিন ১২ এপ্রিল বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত 'বি' ইউনিট, দ্বিতীয় দিন ১৯ এপ্রিল সকাল ১১টা থেকে ১২টা ও দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত 'এ' ইউনিট এবং তৃতীয় দিন ২৬ এপ্রিল সকাল ১১টা থেকে ১২টা ও দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত 'সি' ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি পরীক্ষা 'এমসিকিউ' পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে।
কর্তৃপক্ষের গৃহিত পদক্ষেপসমূহ:
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য জানিয়েছেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রশাসন ইতোমধ্যে অন্তত ১২ টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ হলো- বিভিন্ন পয়েন্টে ৬টি হেল্পডেস্ক, অভিভাবকদের বসার জন্য ১১টি টেন্ট, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ২টি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটসহ ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট স্থানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা, ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ২৫০ জন সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা, ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জার গাইড ও স্টুডেন্টস কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের ১০০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরও জানান, ভর্তি পরীক্ষার তিনদিনে ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল বডি পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে টহল; ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল বক্স স্থাপন এবং ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রক্সিকাণ্ডের সাথে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রক্টর অফিস কর্তৃক চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন ব্যাবস্থা গ্রহণ, খাবারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, অভিভাবকদের জন্য সুপেয় পানির ব্যাবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।
ভর্তিচ্ছুদের প্রতি নির্দেশনা:
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে পালনীয় কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সকাল ১০ টার ভেতর একাডেমিক ভবনগুলোর গেইট খোলা হবে। দিনকাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করা যানবাহন প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল বেগম খালেদা জিয়া হল স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন তুঁত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে, সকাল সাড়ে ৯ টার পরে চারুকলা অনুষদ ফটক দিয়ে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। তবে, শারীরিক প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা সকল রাস্তা ব্যবহার করতে পারবে। সকাল সকাল সাড়ে ৯টার পর একাডেমিক ভবনগুলোর দিকে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটর সাইকেল ও অটো রিক্সাসহ কোনো প্রকার যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। তবে, পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত গাড়িসমূহ এই নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়ায় বসবাসকারীরা ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে পরীক্ষা চলাকালীন আবাসিক এলাকায় প্রবেশের জন্য শুধুমাত্র কাজলা গেট ব্যবহার করবেন এবং বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্যারিস রোড হয়ে মেইন গেট ও রোকেয়া হলের পেছনের ফ্লাইওভার সংলগ্ন রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়াও পরীক্ষার্থীদের বহনকারী বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস জুবেরীভবন সংলগ্ন মাঠে পার্কিং করতে হবে এবং ব্যক্তিগত গাড়িসমূহ সাবাস বাংলাদেশ মাঠে পার্কিং করা যাবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ তাঁদের ব্যক্তিগত গাড়িসমূহ পার্কিংয়ের জন্য সাবাস বাংলাদেশ মাঠ ব্যবহার করবেন।
ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রতারকচক্রের খপ্পরে না পড়ার জন্য সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি এবং অসদুপায় অবলম্বন একটি আলোচিত বিষয়। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি। সংশ্লিষ্ট সকলকে এমন প্রতারকচক্রের খপ্পরে না পড়ার জন্য সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছি। এ ধরনের কোনো কিছুর আভাস-ইঙ্গিত পেলে তা যথাশীঘ্র সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতেও পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।'
সংবাদ সম্মেলনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন ও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসঊদ, ছাত্র-উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম কনক, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার, আইসিটি পরিচালক অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম, ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতক শ্রেণির ভর্তি-পরীক্ষার তিন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারীসহ অন্যান্য অনুষদ অধিকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এমআই