জাহিদুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগের এক নেতাকে আশ্রয় দিয়ে ফাইনান্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। পরে ফাইনান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাদের ওপর পাল্টা হামলা করে। দুই দফা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত চারজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এদিকে আহতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে গেলে ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফের তাদের উপর হামলা করেন। এক পর্যায়ে প্রক্টর এসে পরিবেশ শান্ত করেন।
আহতরা হলেন ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন এবং আসিফুর রহমান।অন্যদিকে ছাত্রদলের রাজশাহী মহানগর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরুখ মাহমুদ এবং আইন বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মুহাইমিনুল ইসলাম নুহান আহত হয়েছেন। আহত শাহরুখ মাহমুদ ও মুহাইমিনুল ইসলাম নুহান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সূচনা হয় শহীদ হবিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাধন মুখার্জির সাথে শাহাদাত হোসেনকে ঘিরে পুরনো একটি ঘটনার জের ধরে। গত বছর রমজানে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে ফিন্যান্স বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেনকে মারধর করেন সাধন মুখার্জি । সোমবার (১৪ এপ্রিল) ক্যাম্পাসে সাধনের সঙ্গে সেই ঘটনার মীমাংসা করতে গেলে কথাকাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হয় শাহাদাত এবং আসিফের সঙ্গে। সাধন মুখার্জির পক্ষ নিয়ে ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফুর রহমানের কাজলার ছাত্রাবাসে যেয়ে বিশৃঙ্খলা করেন সাবেক সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য আকিল বিন তালেব, ছাত্রদল নেতা শাহরুখ মাহমুদসহ ১০-১৫ জন ছাত্রদল কর্মী। এর জেরে মঙ্গলবার শাহাদাতের উপর হামলা চালাতে টুকিটাকি চত্বরে হাজির হন ছাত্রদলের কর্মী আমির ও তার কয়েকজন সহযোগী। এ সময় শাহাদাতকে রক্ষার চেষ্টা করলে তার বন্ধু আসিফুর রহমানকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে আসিফ বাঁশ নিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নোহান আহত হন। কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ছাত্রদল কর্মী শাহরুখকে মারধর করে ফিন্যান্স বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
আহত শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, “গত বছর রমজানে সাধনের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হয়েছিল। সে সময় সে ছাত্রলীগ নেতা কাইয়ুমের অনুসারী ছিল। গতকাল ক্যাম্পাসে দেখা হলে পুরনো ঘটনার কথা বলি, একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। আজ সে ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী নিয়ে এসে আমাদের উপর হামলা চালায়।”
এ দিকে আহত ছাত্রদল কর্মী নুহান আহমেদ বলেন, 'আমি হাসপাতাল থেকে কিছু সময় আগেই বাসায় এসেছি। আমি এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারছি না।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হবিবুর রহমান হল শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাধন মুখার্জি বলেন, আমি বহু আগেই ছাত্রলীগের রাজনীতি বাদ দিয়েছি। ২০২৪ সালে রমজানে এক নারী শিক্ষার্থীকে ইভটিজিংয়ের জন্য ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে ঝামেলা হয়। পরে আমি পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে গেলে আমার ওপর গতকাল হামলা করা হয়েছে।'
ঘটনায় ছাত্রদলের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান মিঠু বলেন, 'সংঘর্ষে আমার জানা মতে ছাত্রদলের সাংগঠনিক পরিচয় ব্যাবহার করে কেউ হামলা করেনি। এটা করা হয়েছে তাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক জায়গা থেকে। এ ছাড়াও ফিন্যান্স বিভাগের সাথেও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অনেকে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। তবে, ছাত্রদলের সাংগঠনিক পরিচয় ব্যবহার করে কেউ কোনো হামলার সাথে যুক্ত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “প্রথমত, তারা আমার শিক্ষার্থী। রাজনৈতিক পরিচয় তাদের থাকতে পারে। অভিযোগ উঠেছে—কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে। যদি তা সত্যি হয়, তবে পুলিশকে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান থাকবে—তারা যেন কোনো উত্তেজনায় জড়িয়ে না পড়ে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রক্টোরিয়াল বডিকে জানায়।”
এমআই