মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন, হাবিপ্রবি:
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পেরিয়েছে। তবে শেষ হয়নি মামলার বিচার কাজ। দীর্ঘ সময় ধরে ধীর গতিতে আগাচ্ছে বিচার কার্যক্রম।
খুনের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়। একইসঙ্গে কোতোয়ালি থানার এসআই আব্দুল নুর বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহত মিল্টনের চাচা মকসুদার রহমান বাদী হয়ে ৩৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার এক নম্বর আসামি তখনকার উপাচার্য প্রফেসর মো. রুহুল আমিন। ২০১৯ সালের মার্চে মামলাগুলো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডিতে) স্থানান্তরিত হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা তিনটি মামলার কাজ চলমান রয়েছে।
দীর্ঘ ৫ বছরেও মামলার কোনও কুল-কিনারা না হওয়ায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দুই নিহত ছাত্রলীগ নেতা জাকারিয়া ও মাহমুদুল হাসান মিল্টনের বাবা-মা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছেলে হারা দুই পরিবারের বাবা-মাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিকভাবে সহায়তাসহ সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন।
তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৯ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির ওসি রমজান আলী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৬ জনের বিরুদ্ধে দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের-১ (সদর)-এ চার্জশিট দাখিল করেন।
২০২০ সালের ৫ অক্টোবর দিনাজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি-১ (সদর) আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসু তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও শহরের মুন্সিপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলামের ছেলে রকিবুল ইসলাম মিথুন (২৫), ছাত্রলীগ নেতা ও পুলহাট কসবা এলাকার হামিদুর রহমানের ছেলে মাহামুদুর রহমান মাসুম (৩৫), হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতা ও রামনগর এলাকার নাজির হোসেনের ছেলে নাহিদ আহম্মেদ নয়ন (৩৫), ছাত্রলীগ নেতা ও ঘাসিপাড়া এলাকার আহসানুল্লাহর ছেলে মমিনুল ইসলাম মোমেন (২৮), স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও ক্ষত্রিপাড়া এলাকার মৃত শরিফুল আহসান লালের ছেলে তায়েফ বিন শরিফ (৩৫) ও ছাত্রলীগ নেতা ফুলবাড়ী উপজেলার স্বজন পুকুর গ্রামের ড্রাইভার আব্দুল মজিদের ছেলে নাজমুল ইসলাম মামুন (২৮)।
জাকারিয়া এবং মিল্টনের স্বজনেরা জানিয়েছেন, দুইটি ভবিষ্যৎ অকালে ঝরে পড়লো, তারচেয়ে বড় কথা মায়ের বুক খালি হয়েছে। পরিবার দুটি এখনো সন্তানের জন্য হুহু করে কেঁদে ওঠে। তারা বলেন, এ ধরণের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সকলের সচেতন থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল হাবিপ্রবির ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে রাত ৮ টার দিকে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন।
এমআই