আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পুনরায় হামলা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরাইল। আল জাজিরা জানিয়েছে, বুধবার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত হয়েছেন বলে উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। ইসরাইলের এমন বর্বর হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার শিশুরা। তাদের ভবিষ্যৎ বলতে এখন শুধু মৃত্যুর দিন গোনা।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজাকে অবরুদ্ধ করার ফলে সেখানে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে পারছে না। এতে শিশুদের খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার ফলে গাজার শিশুরা ভয়াবহ অপুষ্টিতে ধুঁকছে। মানবাধিকার সংস্থাটি পৃথক আরেক রিপোর্টে বলেছে, ১৮ মার্চ পুনরায় হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই শিশু। এখানে স্পষ্ট করার বিষয় হচ্ছে- এই ৫ লাখ ফিলিস্তিনিকে নতুন করে বাস্তুচ্যুত করেছে দখলদার ইসরাইল।
শিশুদের ওপর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিও ইসরাইলকে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে থামাতে পারছে না। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলেছেন, তার দেশের নীতি একদম পরিষ্কার। তারা গাজায় হামাসকে চাপে ফেলতেই মানবকি সহায়তা প্রবেশে অবরোধ দিয়েছে। ১৮ মাস ধরে গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। তাদের হামলায় উপত্যকাটির ৫১ হাজার ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ১৬ হাজার ৪৩২ জন আহত হয়েছেন। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য এটি।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। তারা বলেছে, গাজায় মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ জনে পৌঁছেছে। এখনও কয়েক হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। তারা বেঁচে আছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। ধারণা করা হচ্ছে নিখোঁজ ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। যাদের এখনও উদ্ধার করা হয়নি।
এদিকে গাজায় অবরোধ দেয়ার ফলে উপত্যকাটিতে যে মানবিক সহায়তার ঘাটতি তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে না দেয়ায় শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ- এর এক প্রতিবেদনে ইসরাইলি অবরোধের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, মানবিক সহায়তা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ দেয়ার কারণে গাজায় খাদ্যের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গাজায় এখন মাংস, হাঁস-মুরগি, দুগ্ধজাত পণ্য, শাকসবজি এবং ফলমূলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর খাদ্যের পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে।
ওসিএইচএ- এর তথ্যমতে, মার্চে অপুষ্টিতে ভোগা ৩ হাজার ৬৯৯ জন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যেখানে ফেব্রুয়ারিতে এর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। সেসময় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল দুই হাজার ২৭ জন শিশুকে। এসব পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি গাজায় এখন বিশুদ্ধ খাবার পানিরও সংকট চলছে। বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য এসব উপাদানও পাচ্ছে না গাজার শিশুরা।
সময় জার্নাল/এলআর