আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, শান্তি চুক্তির বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ইঙ্গিত না পাওয়া গেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি চুক্তি প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়াবেন।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) প্যারিসে ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে রুবিও বলেন, 'আমরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ বা মাসের পর মাস ধরে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব না। সুতরাং আমাদের এখন খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং আমি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি সম্ভব কি না তা নিয়ে আলোচনা করছি।'
তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট খুবই আন্তরিক। তিনি এর জন্য অনেক সময় ও শক্তি ব্যয় করেছেন ... বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তবে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, সেগুলোতেও আরও মনোযোগ দেওয়া দরকার।'
ইউক্রেনের সঙ্গে মার্কিন আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতির লক্ষণের মধ্যে রুবিও এ হুঁশিয়ারি দিলেন।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, তিনি আগামী সপ্তাহে কিয়েভের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করার আশা করছেন। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের খনিজ পদার্থে প্রবেশাধিকার পাবে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যানসের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরোধের পর খনিজ চুক্তি সইয়ের প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
বৃহস্পতিবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর, ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টার বিষয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর অংশগ্রহণে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ, উচ্চ পর্যায়ের ও সরাসরি বৈঠক এটি, রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি কাঠামো 'আশাপ্রদ গ্রহণযোগ্যতা' পেয়েছে।
জেলেনস্কির কার্যালয় এই আলোচনাকে গঠনমূলক ও ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছে।
শুক্রবার রুবিওর মন্তব্য হোয়াইট হাউসের ক্রমবর্ধমান হতাশার বহিঃপ্রকাশ, কারণ একের পর এক ভূরাজনৈতিক সংকট সমাধানের অগ্রগতি থমকে আছে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। তবে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি কিছুটা নমনীয়া প্রকাশ করেন এবং এপ্রিল বা মে মাসের মধ্যে একটি চুক্তির সম্ভাবনার কথা বলেন।
রুবিও বলেন, প্যারিস বৈঠকের পর তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বৈঠকটি গঠনমূলক হয়েছে বলে তাকে জানিয়েছেন। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি কাঠামোর 'কিছু বিষয়' সম্পর্কে ল্যাভরভকে অবহিত করেছেন।
রুবিও বলেন, প্যারিস বৈঠকে সম্ভাব্য চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এমন একটি বিষয় 'যা আমরা এমনভাবে সমাধান করতে পারি, যা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য হবে'।
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'আমাদের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোর সমাধান আমাদের খুঁজে বের করতে হবে— এমনকি স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা আদৌ সম্ভব কি না, সেটাও দেখতে হবে।'
তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে একটি শান্তি চুক্তি করা কঠিন হবে, তবে শিগগিরই এটা হওয়ার কোনো না কোনো লক্ষণ থাকা দরকার।
তিনি আরও বলেন, 'কেউ বলছে না যে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এটা হয়ে যাবে। তবে আমরা জানতে চাই আসলে দুই পক্ষের অবস্থান কতটা দূরে এবং সেই ব্যবধান আদৌ কমানো সম্ভব কি না—আমরা যে সময়সীমার কথা ভাবছি, তার মধ্যেই কিছু অগ্রগতি সম্ভব কি না ইত্যাদি।'
ফরাসি প্রেসিডেন্সি বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়—কোনো পক্ষই তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
এমআই