আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তান যখন পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করল, তখনই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠল।
অনেকের কাছেই এটি ছিল পাকিস্তানের জয়। তবে এই সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে।
দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান 'এক্স'-এ লেখেন: 'পাকিস্তানে ভারতের হামলার ব্যাপ্তি ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক বড়। পাকিস্তানের পাল্টা জবাবও—যেখানে একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার খবর মিলেছে—সেই বছরের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। তাদের মধ্যে উত্তেজনা ইতিমধ্যেই ২০১৯ সালের সংকটের তুলনায় অনেক ওপরে উঠে।'
যুদ্ধ যেদিকেই গড়াক না কেন, ধারণা করা হচ্ছে তাতে আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ভারতের হাতে রয়েছে প্রায় ৬৮০টির বেশি যুদ্ধবিমান।
অন্যদিকে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা প্রায় ৪১০টির বেশি। তবে সেখানে কিছু জটিলতা রয়েছে।
পাকিস্তানের মোট যুদ্ধবিমানের মধ্যে প্রায় ৭৫টি হলো এফ-১৬। এগুলো কেনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
তবে ভারতের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, 'এন্ড-ইউজার চুক্তি' ও ভূরাজনৈতিক উদ্বেগ।
পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র এসব এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়েছে মূলত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ব্যবহারের জন্য (বিশেষ করে আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে)—অন্য কোনো রাষ্ট্র, বিশেষত ভারতের বিরুদ্ধে প্রচলিত যুদ্ধের জন্য নয়।
এই শর্ত ভঙ্গ করলে খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি বাধিল, এমনকি নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৯ সালে অভিযোগ উঠেছিল, কাশ্মীরে ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় হামলার জন্য এফ-১৬ ব্যবহার করেছে পাকিস্তান।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য নীরবে বিষয়টি মীমাংসা করেছিল।
তবে জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে পাকিস্তান ডেস্কে দায়িত্ব পালন করা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন সাবেক কর্মকর্তা দ্য প্রিন্টকে বলেন, 'এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুব বেশি কিছু করতে পারবে না। কারণ এন্ড-ইউজার চুক্তির বিধান মেনে চলা আইনিভাবে বাধ্যতামূলক নয়।'
তবু পাকিস্তান এই যুদ্ধবিমান ব্যবহারের ঝুঁকি নেবে কি না, তা বলা কঠিন। চূড়ান্ত প্রয়োজন না হলে ব্যবহারের সম্ভাবনা খুব কম।
তবে পাকিস্তানের হাতে আরেকটি শক্তিশালী বিকল্প রয়েছে—চীনে তৈরি জে-১০সি ভিগোরাস ড্রাগন।
গতি, পাল্লা, রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতায় এই যুদ্ধবিমান অন্যান্য বিমানের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
এই যুদ্ধবিমানে পিএল-১৪ নামক অত্যাধুনিক দূরপাল্লার চীনা এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।
ভারতের বহুল আলোচিত রাফাল জেট মোকাবিলায় এগুলোকেই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
বর্তমানে পাকিস্তানের কাছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি জে-১০সি আছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও পাকিস্তানের হাতে আছে জেএফ-১৭ ব্লক থ্রি—পাকিস্তানের নিজস্ব অত্যাধুনিক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান।
সবমিলিয়ে, পুরনো এফ-১৬ হয়তো এই যুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নাও রাখতে পারে।