বুধবার, ২১ মে ২০২৫

ডিআইইউ শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু; খুন, সড়ক দুর্ঘটনা, নাকি ভিন্ন কিছু?

বুধবার, মে ২১, ২০২৫
ডিআইইউ শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু; খুন, সড়ক দুর্ঘটনা, নাকি ভিন্ন কিছু?

ফয়সাল আহমেদ, ডিআইইউ প্রতিনিধি:


হারানো মোবাইল ফোন খুঁজতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং  বিভাগের ৫৩ ব্যাচের (২য় শিফটের) শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান (২৭)-এর। প্রশ্ন উঠেছে এটা কি স্বাভাবিক মৃত্যু, আত্নহত্যা, দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড?

ঘটনার দিন (১৯ মে, সোমবার) রাত ১২ টা থেকে ২ টার এর মধ্যে দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ১২৫ নাম্বার পিলারের কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়প ছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। দিয়াবাড়ি থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী সকালে কুর্মিটোলা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরে, ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পল্লবী থানায় লাশ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

জানা যায়, মাহমুদুলের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর সাপাহার আশড়ন্দে এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং আবাসিক হলে থাকতেন। 

মাহমুদুল হাসান যে হোস্টেলে থাকতো সেই হোস্টেলের কেয়ার টেকার লিটন জানান,  সকাল আনুমানিক ১১ টার দিকে মাহমুদুল হোস্টেল থেকে বাহিরে যান তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি কোথায় যাচ্ছেন।  মাহমুদুল হাসান বলেন তার ফোন হারিয়ে গেছে সেই ফোন খোঁজার জন্য বের হচ্ছি। তারপর সে আর হোস্টেলে ফিরে আসেনি।  তিনদিন পর জানতে পারলাম সে মারা গেছে। এ মৃত্যুর স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না বলেও জানান তিনি।

এবিষয়ে ঐ হোস্টেলের বাসিন্দা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, এই মৃত্যু কখনোই স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। ফোন হারিয়ে যাবার পরের তিন দিন পর্যন্ত সে কোথায় ছিল? এই প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে। 

মাহমুদুল হাসানের রুমমেট সাদিক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারটার দিকে আমি রুমে আসি। আসার পর দেখি মাহমুদুল ভাই নিজের সাথেই একা একা কথা বলছে। আমার কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক, সন্দেহজনক এবং কোন সমস্যা আছে বলে মনে হলো। আমি তাকপ এসব প্রশ্ন করতেই তিনি অস্বীকার করলেন। পরে ঘুমানোর আগে তিনি ফোনে কার সাথে যেন কথা বললেন। ঘুম থেকে ওঠার পর আমাকে বললো, “আমার যে ফোন হারিয়ে গেছে, ওটা খুঁজতে বাহিরে যাচ্ছি”। এই বলেই সে চলে গেল। এই মৃত্যুটা আমার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। 

এদিকে তার মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল  ইসলাম চাঁদ বলেন, ফোন খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এবং তার মৃত্যু কখনো স্বাভাবিক হতে পারে না। নিখোঁজ হওয়ার পরের তিনদিন সে কোথায় ছিল সেই প্রশ্ন বারবার সামনে উঠে আসছে। আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করা হোক।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং  বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল বাসেত বলেন,  আমি সকাল দশটার দিকে এক্সিডেন্টের কথা জানতে পারি। পরে  সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম এবং বিভাগের কো-অর্ডিনেটর আবিদ হাসানকে সেখানে যেতে বলি এবং তারা আমাকে মৃত্যুর খবরটি দুপুর ১২ টায় নিশ্চিত করে। আমরা ডিপার্টমেন্ট, ভিসি এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাথে কথা বলে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করব। 

সহকারী প্রক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম মামুন বলেন, ঘটনাটা জানতে পারি সকাল দশটার দিকে ডক্টরস স্যারকে বিষয়টি অবহিত করি। প্রক্টর স্যার আমাকে থানায় যেতে বলেন।  থানার এসআই মনির ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে অ্যাক্সিডেন্ট বলে  নিশ্চিত করেন।  তিনি আরো বলেন, ঘটনাটির সঠিক ব্যাখ্যা জানতে হলে ময়না তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।  প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ হাজার  টাকা সহয়তা করেছে। পরবর্তীতে কি হবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত  নিবেন।

এদিকে নিহত মাহমুদুল হাসানের পিতা ইদ্রিস আলী মাস্টার বলেন, আমার ছেলে মাহমুদুল  ঢাকাতে মারা গেছে, এক্সিডেন্ট নাকি খুন হয়েছে আমরা বলতে পারবো  নাহ। আমরা ঢাকা যেতে পারি নাই। আমার চাচাতো ভাই রবিউল মাহমুদুলের লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসছে। রাতেই আমরা মাহমুদুলের লাশ দাফন করি। যেহেতু আমার ছেলে দুনিয়াতে নেই, এখন আমরা বিচার চাই নাহ।

পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম  বলেন,  কুর্মিটোলা মেডিকেলে একটা লাশ এসেছে এমন  সংবাদ পেয়ে দ্রুত একটা টিম যায় সেখানে। গিয়ে দেখতে পায় কিছু লোক তাকে রেখে চলে গেছে। ডাক্তার আমাদের প্রাথমিক ভাবে বলেন এটা এক্সিডেন্ট হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। পরবর্তীতে আমরা লাশের পরিচয় পাই। পোস্টমডেম শেষে লাশ তার আত্নীয় রবিউলের কাছে বুঝে দেওয়া হয়। এখনও তার পরিবার থেকে কোন মামলা করেনি।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল