ধর্ম ডেস্ক:
মসজিদ মুসলমানদের মিলনমেলা। সেখানে মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। রমজান মাসে ইতিকাফ করে থাকে। এ ছাড়া কিছু কাজ আছে, যা মসজিদে করা বৈধ।
যেমন—
১. কোরআন তিলাওয়াত : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো জাতির লোকেরা যখন আল্লাহর ঘরগুলোর মধ্য থেকে কোনো ঘরে একত্র হয়, যেখানে তারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে বা পরস্পর আলোচনা করে, তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল হতে থাকে, তাদের রহমত ঢেকে রাখে এবং ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে। আর আল্লাহ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)
২. জিকির-আজকার করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যতক্ষণ মসজিদে সালাত ও জিকিরে রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তার প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তার পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০০)
৩. ইবাদতের নিয়তে মসজিদে অবস্থান : একজন মুসলমান যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবে, ততক্ষণ সালাতের মধ্যেই থাকবে।
অর্থাৎ সালাত আদায়ের মতো সওয়াব পাবে। হুমাইদ (রহ.) বলেন, আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল (সা.) কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। এক রাতে তিনি এশার সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করেন। সালাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে গেছে।
কিন্তু তোমরা যতক্ষণ সালাতের জন্য অপেক্ষা করেছ, ততক্ষণ সালাত রত ছিলে বলে গণ্য করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৬১)
৪. পাঠদান : মসজিদ হলো শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম স্থান। মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় বিষয়ে প্রতিদিন ইমামের কাছ থেকে শিক্ষা নেবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে। আবার ইমামও বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষা দেবেন। আবু ওয়াকিদ আল-লায়সি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) একবার মসজিদে বসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে আরো লোকজন ছিল।
এমতাবস্থায় তিনজন লোক এলো। তন্মধ্যে দুজন আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দিকে এগিয়ে এলো এবং একজন চলে গেল। আবু ওয়াকিদ (রা.) বলেন, তাঁরা দুজন আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। অতঃপর তাদের একজন মজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়ল এবং অন্যজন তাদের পেছনে বসল। আর তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে গেল। যখন আল্লাহর রাসুল (সা.) অবসর হলেন তখন (সাহাবিদের লক্ষ করে) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এই তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলব না? তাদের একজন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করল, আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিলেন। অন্যজন লজ্জাবোধ করল, তাই আল্লাহ তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ করলেন। আর অন্যজন (মজলিসে হাজির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিল, তাই আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬)
৫. বিচার-ফয়সালা ও মীমাংসা : কোনো বিষয়ে মীমাংসার প্রয়োজন হলে অথবা কোনো বিষয়ে সমাধান দিতে চাইলে মসজিদে বসেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা করতে পারবেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৩)
৬. মসজিদে অবস্থান ও খাওয়াদাওয়া : শর্তসাপেক্ষে মসজিদে অবস্থান করা ও খাওয়াদাওয়া করা জায়েজ। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘খন্দকের যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তির নিক্ষিপ্ত তীরে সাদ ইবনে মুআজ (রা.) আঘাতপ্রাপ্ত হলে রাসুল (সা.) তার জন্য মসজিদের ভেতর একটি তাঁবু টানালেন। যেন তিনি কাছ থেকে তাকে দেখতে পারেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১০১)
আর যারা ইতিকাফ করবে, তারা মসজিদে অবস্থান করবে এবং মসজিদেই খাওয়াদাওয়া করবে। এ ছাড়া রমজান মাসে মসজিদে ইফতারেরও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
৭. প্রয়োজনীয় বৈধ কথাবার্তা বলা : জাবের বিন সামুরা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যে স্থানে সালাত আদায় করতেন সূর্য পূর্ণভাবে উদয় না হওয়া পর্যন্ত ওই স্থান থেকে উঠতেন না। সূর্য উদয় হলে উঠে দাঁড়াতেন। আর ইত্যবসরে কথাবার্তা বলতেন...। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৯৪)
৮. ঘুমানো : বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানো যায়। আব্বাদ ইবনু তামিম (রা.) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে মসজিদের মধ্যে চিত হয়ে এক পা অন্য পায়ের ওপর রেখে শায়িত অবস্থায় দেখেছি।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৫)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় মসজিদে ঘুমাতাম। অথচ আমি তখন যুবক ছিলাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৪০)
তবে এ ক্ষেত্রে মসজিদের পবিত্রতার আদবগুলো যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।