ইসাহাক আলী, নাটোর প্রতিনিধি:
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, কয়েকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের গুঞ্জন চলছে। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তিন বাহিনীর প্রধানের সাথে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুসের বৈঠক হয়েছে । এটার এক-দুইদিন পরে অফিসার্স এড্রেস ছিল। সেখানে প্রধান সেনাপতি (সেনাবাহিনী প্রধান) তার অফিসারদের উদ্দেশ্যে কি বলেছেন তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। যদিও এর অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট আইএসপিআর থেকে দেওয়া হয়নি। আমরা যদি মনে করি তিনি (সেনা প্রধান) ওগুলো বলেছেন তাহলে বলি, একই রকম বক্তব্য তিনি বিভিন্ন সময় দিয়েছেন। নির্বাচন কতদিনের মধ্যে হওয়া উচিত, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি নিশ্চিত করা উচিত, এই সরকারের মেয়াদ বেশিদিন থাকা উচিত না এইসব কথা বলেছেন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ , র ্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী বা অন্য কারও দেশের রাজনীতি নিয়ে পাবলিক ফোরামে কথা বলার এখতিয়ার ওনাদের নাই। তাদের কাজ হচ্ছে যে সরকার ক্ষমতায় থাকবেন তাদের হুকুম মেনে চলা।
শনিবার ( ২৪ মে) দুপুর দুইটায় নাটোর শহরের একটি রেস্তোরাঁয় জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা এসেছে সত্যি যদি তিনি এগুলো এড্রেস করে বলে থাকেন তাহলে তিনি এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন। অন্তবর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা মিলিটারি ক্যু এর শামিল। যেটা করার ন্যূনতম এখতিয়ার-অধিকার ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান উনাকে ( সেনা প্রধানকে) দেয়নি, এমনকি কাউকে দেয়নি বাংলাদেশে। তিনি (সেনা প্রধান) অনেক সময় বক্তব্যে বলেন যে তিনি অভিভাবকহীন। আপনার অভিভাবকহীন প্রশ্ন আসতেছে কেন? দেশে অন্তর্বর্তী সরকার আছে। উনি বলছেন— এ সরকারের ম্যান্ডেট নাই, চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যু সহ অনেক বিষয়ের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার নিবে। মেন্ডেটের প্রশ্নের আলোচনার উনি কে? ম্যান্ডেটের আলোচনা করবে পলিটিক্যাল পার্টি- সাধারণ মানুষ। আর গণঅভ্যুত্থান-ই হচ্ছে একটি ম্যান্ডেট। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ম্যান্ডেটয়ালা সরকার হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল এই সরকারকে অনুমোদন দিয়েছে, সম্মতি দিয়েছে শাসন করার জন্য। ৫৩ বছরের ইতিহাসে এমন সরকার আসেনি।
ফুয়াদ বলেন, গত কয়েক মাস ধরে ভারতের গণমাধ্যমে আমরা যা যা শুনছি। যেই যেই বক্তব্য, যেই যেই শব্দে শুনছি তিনি ওগুলোই বলছেন। এই দিল্লির গোলামী থেকেই তো আমরা মুক্ত হয়েছি ১৪০০ জীবনের বিনিময়ে। অতএব আবার ইন্ডিয়ান ন্যারেটিভ কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করাটা হচ্ছে মীরজাফরের মত বাংলাকে বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত। ১/১১ সময় আমরা দেখেছি ফখরুদ্দিন- মইনুদ্দিন কিভাবে প্রলব মুখার্জির দরগায় গিয়ে কিভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটাকে লিখে দিয়ে এসেছিল। তাই আমরা সকল বাহিনীকে বলছি দয়া করে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বসবেন। তাকে বলবেন দেশের স্বার্থে এটা হওয়া উচিত- এটা হওয়া উচিত নয়।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ কোন সমাধান নয় বরং সেটা হলে দিল্লিই জয়লাভ করবে। দিল্লির চক্রান্তে দেশে অরাজক পরিস্থিতির কৌশল হিসাবে এটা করা হচ্ছে।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ আরো বলেন, শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা যাবে না কোন সমালোচনা করার আগে তার নেতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে আধুনিকায়ন হলে কি ধরনের ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে পরিসংখ্যান না থাকলেও বিরোধিতা করা হচ্ছে এছাড়া মানবিক করিডরের ব্যাপারে তিনি তার দলের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে যদি করিডোর দেওয়া যায় সে ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাপ্রধানের যে বক্তব্য উঠে এসেছে সেটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তিনি উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেছেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে যা তাকে দেয়া হয়নি। তাকে সংযত আচরণের আহ্বান জানান ব্যারিস্টার ফুয়াদ।
এছাড়া জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার সাথে জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য বাহিনীর সম্পৃক্ততা প্রমাণ করেছে বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে নিজেদের অফিসারদের রক্ষা করার মানসিকতা পরিহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেদের সংশোধনের আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবি পার্টির নাটোর জেলার আহ্বায়ক মো. শাহ্ আলম ও যুগ্ম আহবার শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এমআই