রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

রোববার, মে ২৫, ২০২৫
সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ-২০২৫ বাতিলের দাবিতে রোববার সকালে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন তাঁরা। 

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি মো. বাদিউল কবির ও কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম। বাদিউল কবীর সমকালকে বলেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে সব আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধান বিবৃত আছে। এখন অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিবর্তনমূলক ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। এটি কালাকানুন। তারা দ্রুত এটি প্রত্যাহার চান।

সকালে সচিবালয়ে দেখা যায়, কর্মচারীরা দপ্তর ছেড়ে নিচে নেমে মিছিলে যোগ দেন। বিপুলসংখ্যক কর্মচারীর উপস্থিতিতে মিছিল থেকে স্লোগান দেওয়া হয় ‘অবৈধ কালো আইন মানব না’।  

বৃহস্পতিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। তবে অধ্যাদেশের প্রতিবাদ করেছে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন। ওই দিন সকাল থেকেই সচিবালয়ে কর্মচারীরা সংগঠিত হয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেন। সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশের প্রতিবাদ জানায় সচিবালয়ের একাধিক কর্মচারী সংগঠন। সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের দুই অংশ এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন লিখিত বিবৃতি দিয়েছে।

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ জানিয়েছেন, ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানের প্রস্তাবিত ধারাগুলো সংযোজন করা হলে দেশে সংকট সৃষ্টি হবে। কারণ, ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানের প্রস্তাবিত ধারাগুলো বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জরুরি সভায় উপস্থিত নেতারা জানান, নতুন অধ্যাদেশ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। গোপনে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং (আইনি মতামত) নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করে অনুমোদন দেওয়া হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ জন্য দেশের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ আইন জারি হলে কর্মচারীদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা সংকুচিত হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার বেশি হবে। বিভিন্ন কারণে অপছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে নাজেহাল হবে। চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে। অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অবিলম্বে বাতিল করা প্রয়োজন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেই তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। তবে খসড়ায় কী আছে বা চাকরি আইনে কী কী পরিবর্তন আনা হবে, সে বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপনের আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে খসড়া তৈরি করেছিল, তাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সহজেই শাস্তি, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুযোগ তৈরির কথা বলা হয়। সেই খসড়ায় চার ধরনের অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তি আওতাভুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যাতে অন্য কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য তৈরি হয় বা শৃঙ্খলা ব্যাহত হয় বা কাজে বাধার সৃষ্টি হয়। কোনো কর্মচারী অন্যদের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে বা আলাদাভাবে ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। অন্য কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে, বিরত থাকতে বা কর্তব্য পালন না করতে উস্কানি দেওয়া যাবে না। যে কোনো কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে বা কাজ না করতে প্ররোচিত করা যাবে না। এসব অপরাধের তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে– বরখাস্ত, অব্যাহতি এবং পদাবনতি বা বেতন হ্রাস।

খসড়ায় মূলত ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ-১৯৭৯ যুক্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত মার্চে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বলেছিল, দেশের বিদ্যমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নানা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বসহ অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আইনসংগত আদেশ-নির্দেশ পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ সরকারি কর্মকাণ্ড সম্পাদনে শৈথিল্য প্রদর্শিত হচ্ছে। এ কারণে সরকারি কর্মচারীদের বিশৃঙ্খলার বিষয়ে দ্রুত আইনগত কার্যক্রম গ্রহণের ব্যবস্থা হিসেবে রহিত করা ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’ পুনরায় কার্যকর করার প্রস্তাব করে তারা। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিশেষ বিধান পুনরায় কার্যকর না করে সরকারি চাকরি আইনের সঙ্গে যুক্ত করেছে। 

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে জারি করা এই অধ্যাদেশ রহিত হয়ে যায়। তবে ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি আইন জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ আইন, ২০১৩’ দ্বারা এ অধ্যাদেশ বহাল রাখা হয়। সরকারি চাকরি আইনের সঙ্গে অধ্যাদেশটি যুক্ত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করে। জানা গেছে, উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পাওয়ায় সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ি তদন্ত ছাড়াই সরকারি কর্মকর্তাদের অব্যাহতি দেওয়া যাবে।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল