মোঃ এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মোঃ শহীদ নামে এক মাদকসেবীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। শহীদ উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের আঠার বাঁক গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, এক সময়ে ছাত্রলীগ কর্মী পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সক্রিয় কর্মী শহীদ ৫ আগষ্টের পরে রাজনৈতিক রুপ পরিবর্তন করে যুবদল কর্মী সেজে এলাকায় মাদক ও চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তার বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষকে হুমকি, মারধর ও চাঁদাবাজির অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারী তার কথামতো পাশের গ্রাম থেকে মাদক না আনায় একই গ্রামের মহিন নামের এক অটোরিকশা চালককে বেধম মারধর করে। এতে মহিনের একটি পা ভেঙে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অসুস্থ অবস্থায় বৃদ্ধ মা ও বাবাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে মহিন। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার কয়েকদিন পরে স্থানীয় মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একটি শালিশে বসে। শালিশে সর্বসম্মতিক্রমে শহীদের এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা পরিশোধের জন্য ১০ দিনের সময় নেয় শহীদের তিন ভাই আবু হানিফ, ভিডিওকলে সংযুক্ত হয়ে প্রবাসী সুমন ও শাহ পরান। শালিশের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ধার্যকৃত জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে শহীদ ও তার ভাইয়েরা উল্টো মহিন এবং শালিসদারদেরকে হুমকি দিতে থাকে।
এদিকে জরিমানার টাকা আদায় করে হতদরিদ্র মহিনের চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং চিহ্নিত মাদকসেবী ও চাঁদাবাজ শহীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর দিয়েছে।
অপরদিকে শহীদ ও তার ভাই হানিফের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেছে আমান উল্লাহ নামের এক প্রবাসী।
চৌদ্দগ্রাম থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আঠার বাঁক গ্রামের মৃত মিন্নত আলীর ছেলে কাতার প্রবাসী আমান উল্লাহর নিজ বাড়িতে ঘর নির্মাণ কাজ চলছিল। ঘর নির্মাণ করতে হলে শহীদকে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। টাকা না পেয়ে বিভিন্ন সময় শহীদ নির্মাণ শ্রমিকদেরকে হুমকি দিতে থাকে। গত ১২ ফেব্রæয়ারী স্থানীয় কাদৈর বাজার থেকে আসার পথে শহীদ ও তার বাহিনী ওই এলাকার টুকু সওদাগরের বাড়ির সামনে আমান উল্লাহর পথরোধ করে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিন দিনের মধ্যে টাকা না দিলে প্রবাসী আমান উল্লাহ ও তার পরিবারকে হত্যা করার হুমকি দেয়। বিষয়টি শহীদের বড় ভাই হানিফকে জানালে সেও ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে হুমকি দিতে থাকে। এর আগেও শহীদের বিরুদ্ধে প্রবাসী আমান উল্লাহ কুমিল্লার আদালতে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ দায়ের করে। ভবিষ্যতে আর এমন আচরণ করবে না মর্মে শহীদ আদালতে মুচলেকা দিয়ে আসে।
চিহ্নিত মাদকসেবী ও চাঁদাবাজ শহীদ এবং তার বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছে এলাকাবাসী।
বেশ কয়েকবার শহীদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মহিন বলেন, আমি আজ অসহায়, পঙ্গুত্ব বরণ করে দিন কাটছে। প্রতিনিয়ত শহিদ ও তার বড় ভাই আবু হানিফের প্রাণনাশের হুমকিতে দিন কাটছে। আমি জীবনের নিরাপত্তা চাই, আমার বৃদ্ধ মা ও বাবাসহ বাঁচতে চাই। আমি থানা পুলিশ ও এলাকাবাসীর সাহায্য চাই।
এই দিকে শহিদের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার সকালে আঠার বাঁক গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদের সাথে সাক্ষাত করেন। গ্রামবাসী এই সময়ে মহিনের অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া এবং মাদক থেকে গ্রামবাসীকে বাঁচাতে সহযোগিতা চেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় আবুল কাশেম সর্দার বলেন, ‘শহীদ গং মহিনকে মারধর করে গুরুতর জখম করে। কিন্তু এরপর একবারের জন্যও তাকে দেখে আসেনি এবং খোঁজখবর নেয়নি। এটা অমানবিক’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল হোসেন অপু বলেন, শালিশে শহীদ হাজির হয়নি। তার ভাই হানিফ উপস্থিত ছিল। তিনি রায় মেনে স্বাক্ষরও করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে শহীদ গং রায় অস্বীকার করে এবং মহিনের চিকিৎসার জন্য টাকা চাইলে দিবে না বলে হুমকি দেয়’।
চৌদ্দগ্রাম থানার সেকেন্ড অফিসার সানা উল্লাহ বলেন, আঠাক বাঁক গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ওসি স্যারের সাথে কথা বলেছেন। শহীদের ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
এমআই