স্পোর্টস ডেস্ক:
অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে চলা অভিযানের বিপক্ষে চলা তুমুল বিক্ষোভের চতুর্থ দিনে লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও কয়েক হাজার সেনা পাঠিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
মঙ্গলবার শহরটিতে ৭০০-র মতো মেরিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, বিশৃঙ্খলা দমনে নিয়োজিত ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য সংখ্যাও দ্বিগুণ বাড়িয়ে চার হাজার করা হয়েছে, বলছে বিবিসি।
এত সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম বলেছেন, এটি ‘এক স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্টের বিকারগ্রস্ত ফ্যান্টাসি পূরণের’ পদক্ষেপ।
গভর্নরের অনুমতি ছাড়া সেনা পাঠানোয় তার রাজ্য এরই মধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘটনা বেশ বিরল।
শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে অন্তত চারজন মেক্সিকান নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ওই চারজনকে এরই মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মেক্সিকোর পররাষ্ট্র দপ্তর।
অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে অভিযানকে কেন্দ্র করে লস অ্যাঞ্জেলেসে যে তুলকালাম কাণ্ড চলছে, তার সূত্র ধরে ১৯৬৫ সালের পর প্রথম গভর্নরের অনুমতি ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোনো শহরে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা পাঠালেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মেরিন সেনা মোতায়েনের ঘটনাও বিরল। ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলা বা ২০০৫ সালের ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার মতো বড়সড় কোনো দুর্যোগের পর তাদের দেখা যেত।
তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন ‘বিদ্রোহ আইন’ প্রয়োগ করেনি, তেমনটা হলে মোতায়েন করা সেনাদের পুলিশের দায়িত্বও পালন করতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কৌঁসুলি রাজ্য কর্তৃপক্ষের আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে বিবিসি রেডিও ফোরের এক অনুষ্ঠানে ডিস্ট্রিস্ট অ্যাটর্নি নাথান হচম্যান বলেছেন, “এখনও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যেখানে স্থানীয় পুলিশ তা সামলাতে পারবে না।”
শহরের ‘খুব সামান্য অংশে’ বিক্ষোভ হচ্ছে, আর তার থেকেও কম সংখ্যক মানুষ আইন অমান্য করছেন, বলেছেন তিনি।
একইদিন মার্কিন সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ক্যালিফোর্নিয়ার টোয়েন্টিনাইন পামস থেকে পাঠানো সপ্তম মেরিনের দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নের ৭০০ সদস্য অভিবাসন কর্মকর্তাসহ ফেডারেল সম্পত্তি ও কর্মীদের সুরক্ষায় সহায়তা করবে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ শহরটির একটি ফেডারেল আটককেন্দ্রের বাইরে জড়ো হওয়া কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে স্টান গ্রেনেড ও গ্যাস ক্যানিস্টার ছুড়েছিল।
কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের ওই আটককেন্দ্রে রাখা হয়।
বিক্ষোভকারীদের আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ওই আটককেন্দ্রের বাইরে রাখতে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা ভবনটির চারপাশ ঘিরে রেখেছিল।
বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন ভবনটি সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে পাথরসহ নানান কিছু ছুড়েছে বলে সোমবার জানায় লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ (এলএপিডি)।
পরে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এক ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করে ওই বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে ফেডারেল কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার অভিযোগ আনেন।
এলপিডিও রেইনা নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে, তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায়ও যুক্ত করা হচ্ছে, বলেছিলেন বন্ডি।
বিবিসি জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এ পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, ডালাস, অস্টিন ও সান ফ্রান্সিসকোসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৯টি শহরে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তারা লাতিন আমেরিকান অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে এমনটা জানাজানি হওয়ার পর প্রথম লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখা দেয়।
এরপর নানা জায়গায় লুটতরাজ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপের খবর পাওয়া যায়। বিক্ষোভকারীরা পরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে যান চলাচলও বন্ধ করে দেন।
এলএপিডি বলেছে, তারা শনিবার রাতে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার গ্রেপ্তার করেছে আরও ২১ জনকে।
এদের বিরুদ্ধে ককটেল নিক্ষেপ করে হত্যাচেষ্টা, লুট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণসহ নানান অভিযোগও আনা হয়েছে।
বিক্ষোভ দমনে সপ্তাহান্তে কয়েকশ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ‘প্রাণঘাতী নয়’ এমন নানান কিছু ব্যবহার করা হয়েছে, বলেছে তারা।