আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আবারও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা শুরু করবে। তবে এবার আবেদনকারীদের তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো সর্বজনীন করতে বলা হবে, যাতে আরও কড়া যাচাই-বাছাই করা যায়। খবর বিবিসির।
সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখে কোনো ধরনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব আছে কিনা—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান কিংবা দেশটির প্রতিষ্ঠার মূলনীতির প্রতি।
এর আগে মে মাসের শেষদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এই ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত করেছিল, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী মনোভাবসম্পন্ন আবেদনকারীদের ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছিল।
এই নতুন নির্দেশনা মূলত 'এফ' ক্যাটাগরির ভিসা আবেদনকারীদের ওপর প্রভাব ফেলবে, যা সাধারণত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত 'এম' ভিসা এবং বিনিময় শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত 'জে' ভিসা আবেদনকারীরাও এই নতুন নীতির আওতাভুক্ত হবেন।
এছাড়া, যদি কোনো আবেদনকারী তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট করে রাখেন, তাহলে সেটিকে তার কর্মকাণ্ড গোপন করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হতে পারে বলে মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে।
পররাষ্ট্র দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'মার্কিন নাগরিকরা আশা করেন যে তাদের সরকার দেশকে আরও নিরাপদ করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে, আর ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিদিনই ঠিক সেটাই করছে।'
ভিসা কর্মকর্তাদের আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেন যারা ঘোষিত বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন জানায়, তাদের সাহায্য করে বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করে; কিংবা যারা অবৈধভাবে ইহুদি-বিরোধী হয়রানি বা সহিংসতায় জড়িত।
এই পদক্ষেপটি ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে শুরু করা কঠোর নজরদারির অংশ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যন্ত 'বামপন্থী' হিসেবে বিবেচনা করেন এবং অভিযোগ করেন, ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ চলাকালে এসব বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি-বিরোধিতার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।
ট্রাম্পের এই কঠোর অভিযানের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য শতশত কোটি ডলারের সরকারি অর্থ সহায়তা স্থগিত, ছাত্রদের বিতাড়ন এবং ভিসা বাতিলের চেষ্টাও করেছে এ প্রশাসন। তবে এসব উদ্যোগের অনেকটাই মার্কিন আদালত অবরুদ্ধ করে দিয়েছে।
প্রেসিডেন্টের নজরদারির আওতায় থাকা অন্যতম প্রতিষ্ঠান হলো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যার ২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান স্থগিত করা হয়েছে।
ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি থেকে বিরত রাখার চেষ্টাও করেছিলেন, তবে আদালতে মামলাটি চলমান থাকায় একজন ফেডারেল বিচারক আপাতত সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন।
ওপেন ডোর্স নামক একটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে বিশ্বের ২১০টিরও বেশি দেশ থেকে ১১ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।