কাজী মো. ইসমাঈল হোসেন:
দেশের নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠান জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শহর থেকে কিছুটা দূরে,প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা শান্ত পরিবেশে অবস্থিত এই ক্যাম্পাস।বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি একদিকে যেমন শিক্ষার জন্য অনুকূল পরিবেশ অপর দিকে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল প্লাটফর্মের যথেষ্ট অভাব।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাত বছর পার হলেও নেই কোন আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত বা সক্রিয় সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। যার কারণে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিনের খেরোখাতা যেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বেনামে ফেসবুক গ্রুপ। যেখানে নামে বেনামে লেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথাগুলো। যেখানে লেখা হয় ভাবনার খসড়া, আর তৈরি হয় ভবিষ্যতের মানচিত্র।
জাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো ঘুরেফিরে বন্দী হয়ে পড়ে ফেসবুক টাইমলাইন/গ্রুপে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে রাগ, ক্ষোভ,অভিযোগ তুলে ধরে এই সব গ্রুপে। মাঝে মাঝে প্রতিপক্ষকে অপমানের মাত্রা এতোটাই তীব্র যে এমন অপমান হজম করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। আর তখনেই শুরু হয় পক্ষ বিপক্ষের কি-বোর্ড যুদ্ধ। কখনোবা এই কিবোর্ড যুদ্ধেই জাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মানসপট থেকে ধামাচাপা পরে যায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু।
দেশের চলমান ইস্যুর চেয়েও ঢের ইস্যু লেগে থাকে জাবিপ্রবির নাম-বেনামের গ্রুপে। কেউ সমালোচনা করে, কেউ সমালোচনা দেখে, কেউবা সমালোচনার মূল বিন্দু অনুসন্ধান করে, আর কিছু উৎসুক জনতা ভোটের মতো একের পর হা হা রিয়েক্ট দেন। আবার কিছু অসাধারণ অনুভূতিহীন জনতা নিজের নিরপেক্ষ অবস্থান জানান দিতে লাইক রিয়েক্ট দেয়।
অথচ এই ভার্চুয়াল উৎসবে মেতে থাকা শিক্ষার্থীরা নিজেদের আবেগ-উচ্চারণের জন্য খুঁজে পায় না শুদ্ধ প্ল্যাটফর্ম। সাংস্কৃতিক চর্চা? সমাজসেবা? "এসব যেন আকাশে ঘুড়ির মতো, যার সুতো থাকে না, আর পাটের মাঞ্জা কাটে কেউ না। "তবে হ্যাঁ, বিতর্ক পরিষদ গঠনের মাধ্যমে অন্তত কথা বলার মতো ঠাঁই মিলেছে বাকপটু শিক্ষার্থীদের।
বিগত সরকারের সময় ছাত্ররাজনীতি এবং প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কারণে ক্লাব গঠনের কোনো প্রক্রিয়া এগোতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের যেকোনো সাংগঠনিক উদ্যোগ রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। সে সময় ছাত্ররাজনীতির ভয়াল ছায়ায় ক্লাব গঠনের পূর্বেই ক্লাবের কবর রচনা করতো। তাদের দৃষ্টিকোন থেকে ক্লাব মানেই ছিলো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি!
তবে সময় এখন পাল্টেছে। ফ্যাসিবাদের আবরণ ছিঁড়ে শিক্ষার্থীরা এখন একটু একটু করে শ্বাস নিচ্ছে স্বাধীনতার আলোয়। কেউ স্বেচ্ছাসেবী হতে চায়, কেউ সমাজের পাশে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু আফসোস, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতার দেয়ালে প্রতিটি উদ্যোগ গিয়ে ঠেকে মুখ থুবড়ে।
যদি একটুখানি আশার বাতাস আসে প্রশাসনিক সাড়ায়, তাহলে হয়তো একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাজসেবায় হাঁটবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।
যদি সেই দিন আসে, তবে এই ভার্চুয়াল খেরোখাতা নয়, বাস্তব প্ল্যাটফর্মই হবে জাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সত্যিকার প্লাটফর্ম।
লেখক: কাজী মো. ইসমাঈল হোসেন
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।