সিয়াম, বেরোবি সংবাদদাতা:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যা মামলার আসামি সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম কে শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য তার বিভাগের শিক্ষার্থী, কয়েকজন সমন্বয়ক ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ মাঠে নেমেছে।
বৃহস্পতিবার আবু সাঈদ হত্যা মামলার চার্জ শিট জমা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। বিকেল ৩ টায় ছাত্রদের আন্দোলনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশের যোগ দেয়ার খবর পাওয়া যায়।
বিকেল পাঁচটায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশের নেতৃত্বে শহীদ আবু সাইদ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত নিয়ে উদ্বেগ ও সাবেক প্রক্টরের পক্ষ নিয়ে একটি মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কট্টোর আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ও নীলদল প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ড. আপেল মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক হলুদ দলের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক গন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিয়ুর রহমান প্রধান।যিনি ২০২৪ এর ডামি নির্বাচনের নির্বাচনী লিফলেট বিতরণ করেন।এছাড়াও মানববন্ধনে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি হলুদ দলের সদস্য ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড.বিজন মোহন চাকি, নীল দলের সদস্য অধ্যাপক ড.মো.কামরুজ্জামান। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ -তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক গন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক।এবং ছাত্রলীগের কর্মী রায়হান কবীর।সমন্বয়কদের মধ্যে এস এম আশিকুর রহমান আশিক, রহমত আলী,নয়ন,শাহরিয়ার সোহাগ,হাজিম উল হক,আরমান সহ অনেকে।
এই সময় তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতি আহ্বান জানান যে, প্রকৃত দায়ীদের-বিশেষত যাদের নির্দেশে এই গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে-তাদের আইনের আওতায় এনে প্রকৃক্ত বিচারের প্রতিফলন নিশ্চিত করেন। একইসাথে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা ও নাগরিক সমাজকে আহ্বান জানাই, তারা যেন এই বিচার প্রক্রিয়ার যথাযথ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকালে পুলিশের বর্বর গুলিবর্ষণের শিকার হন। ওই ঘটনায় আমাদের প্রিয় সহযোদ্ধা আবু সাঈদ শহীদ হন এবং শতাধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এই নির্মম পুলিশী হামলার চিত্র শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণ নয়, সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে।
এই বর্বর ঘটনার পর স্বৈরাচারী সরকারের পতনের প্রেক্ষিতে শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে এবং আমরা আন্দোলনের সহযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষী হয়ে একটি মামলা দায়ের করি। শুরুতে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর উপর, তবে পরে তদন্তের গতিশীলতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করে এবং আমরা নিজেরা প্রমাণাদি ও তথ্য স্বপ্রণোদিত হয়ে সরবরাহ করি। তবে আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আয়োজিত প্রতিটি সংবাদ সম্মেলনে তারা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। একইসাথে তারা এমন কিছু ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে উপস্থাপন করছে, যারা ঘটনার পরিণতিতে আংশিক দায়ি হলেও মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদের দায়মুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আজ (২৬ জুন ২০২৫) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি তদন্ত প্রতিবেদনে ৩০ জন ব্যক্তির সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেছে। তবে পূর্বের ধারাবাহিকতায় এবারও তারা কোনো পুলিশ সদস্যের নাম উল্লেখ করেননি। বরং একটি প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে অভিযুক্ত করেছেন, যা আমাদের কাছে প্রক্রিয়াগত বিচ্যুতি ও প্রহসনের শামিল।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি পন্থী শিক্ষক ও প্রক্টর ড.মো:ফেরদৌস রহমান বলেন,এখানে আওয়ামী, বিএনপি, জামায়াত বড় কথা নয়, আমাদের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশি হত্যাকান্ডে শহীদ হয়েছে। এর সঠিক বিচার সকলে চায়।তবে কেউ যেন তার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শাস্তি না পায় সেটি আমরা আশা করি।
একে