সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

ফিরে দেখা: কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল, সংঘর্ষে আরও ১৯ জন নিহত

সোমবার, জুলাই ২১, ২০২৫
ফিরে দেখা: কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল, সংঘর্ষে আরও ১৯ জন নিহত

সময় জার্নাল ডেস্ক:

কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেওয়ার পর ২০২৪ সালের ২১ জুলাই (রোববার) সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

২১ জুলাই দেশজুড়ে কারফিউয়ের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন সংঘর্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে ১৯ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন এবং নরসিংদীতে ৪, গাজীপুরে ২, নারায়ণগঞ্জে ১, সাভারে ১ ও চট্টগ্রামে ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। (সূত্র: ২২ জুলাই, প্রথম আলো)।

এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকশ আন্দোলনকারী আহত হন, যাদের অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। এছাড়া এদিন সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৯ গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

২১ জুলাই চতুর্থ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন এবং কারফিউ বলবৎ ছিল। এদিন ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় আন্দোলের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায় এবং পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে শুক্রবার (১৯ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন সকাল ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। সব পক্ষের শুনানি শেষে দুপুর ১টার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়। এতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করা হয়।

রায়ে বলা হয়, কোটাপ্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে। এই নির্দেশনার আলোকে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিতে এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, এই নির্দেশনা ও আদেশ সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজনে ও সার্বিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।

কোটা ইস্যুতে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে স্বাগত জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রায়ের পর এ প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, আপিল বিভাগের রায়কে শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে দেখছেন তারা।

এদিকে এ রায়ের পর শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে চার দফা দাবি পূরণে বৈষম্যবারোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেন। চার দফা দাবির মধ্যে ছিল- কারফিউ তুলে দেওয়া, ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এদিন আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহ্বান এবং ২২ জুলাই (সোমবার) গায়েবানা জানাজা কর্মসূচির ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

সরকারের ঘোষাণা অনুযায়ী, ২১ জুলাই সারাদেশে সাধারণ ছুটি ছিল। এ অবস্থায় সারা দশের পোশাক কারখানাসহ অন্য বড় শিল্প-কারখানাও বন্ধ রাখা হয়।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ২২ জুলাই (সোমবার) কারফিউ বলবৎ থাকবে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। ঢাকা জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর এবং নারায়ণগঞ্জে কারফিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসকরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্দোলনকালীদের দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতেও এদিন রাজধানীর বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল ও মিরপুর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনের সংঘর্ষ, গুলি, হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়। এসব মামলায় গত পাঁচ দিনে ঢাকায় প্রায় ২০০ জনসহ সারাদেশে অন্তত ৫৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন বেশির ভাগ ছিলেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা।

রাজধানীর সেতু ভবন ভাঙচুর, রামপুরার বিটিভির ভবনে আগুন দেওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মামলায় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ৯ দফা দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

২১ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গণমাধ্যমকে নিহতের তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০ জুলাই রাত ৮টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে হামলা চালান আন্দোলনকারীরা। রোববার সকালে দ্বিতীয় দফায় জাহাঙ্গীরের বাসভবনে হামলা চালানো হয়। তারা ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভবনের বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করেন।

এদিন এক বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত পিএসসি’র সকল ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

২১ জুলাই রাতে দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল