বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মাইলস্টোন ছাড়তে পারলেন দুই উপদেষ্টা-প্রেস সচিব

মঙ্গলবার, জুলাই ২২, ২০২৫
৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মাইলস্টোন ছাড়তে পারলেন দুই উপদেষ্টা-প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে আটকা পড়া আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার নয় ঘণ্টা পর পুলিশি পাহারায় বের হতে পেরেছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাদের বহন করা পতাকাবিহীন সরকারি গাড়ি মেট্রোরেলের ডিপোর ভেতরের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যায়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ আরও তিনজন এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন। তারাও সারাদিন কলেজে আটকা ছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “উপদেষ্টারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানান। সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এজন্য উপদেষ্টারা বের হতে পারছিলেন না।

“সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তারা বেরিয়ে গেছেন।”

এর আগে বিকালে একবার পুলিশি পাহারায় দুই উপদেষ্টা স্কুল ক্যাম্পাস ছাড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

এই স্কুল ক্যাম্পাসে সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় ক্ষতিপূরণসহ ছয় দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

বেলা পৌনে ১০টায় ঘটনাস্থলে এসে তোপের মুখে পড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এসময় তাকে দেখে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি দেখেও একই স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তারা ‘উই ওয়ান্ট, জাস্টিস', ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

পরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আইন উপদেষ্টা। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

ওই বৈঠকের পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বেরিয়ে এসে আসিফ নজরুল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সব দাবি ‘মেনে নেওয়ার’ আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, “আপনারা যে দাবিগুলো করেছেন, ছয় দফা দাবি সেটার সাথে আমরা সম্পূর্ণ একমত। এবং আপনারা যে দাবি করেছেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি।

"আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা আপনাদের প্রতিটি দাবি পূরণ করব। আমাদের ওপর আপনারা বিশ্বাস রাখেন।"

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে ‘যারা খারাপ ব্যবহার করেছেন’ তাদের বিরুদ্ধেও ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে’ আশ্বাস দেন আইন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “এছাড়া আপনাদের সাথে যে বাহিনীরা খারাপ ব্যবহার করেছে, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষমাচাচ্ছি। এবং এই ব্যাপারে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"

আইন উপদেষ্টা কথা শেষ হওয়ার পরপরই তাদের দিকে তেড়ে যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। দুই উপদেষ্টা এবং প্রেস সচিব তখন স্কুলের সম্মেলন কক্ষে চলে যান।

শিক্ষার্থীরা তখন বাইরে দাঁড়িয়ে 'লাশ নিয়ে রাজনীতি, চলবে না চলবে না', 'আমার ভাই মরল কেন, জবাব চাই জবাব চাই', ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান ধরেন।

দুপুর সোয়া ২টার দিকে উপদেষ্টারা বের হবেন শোনার পর শিক্ষার্থীদের একটি দল মূল ফটক আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের একটি ডাবল কেবিন পিকআপও ভাংচুরও করা হয়।

এ সময় কয়েক প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ আসতে দেখা যায়। বিকেল ৩টার দিকে এক প্লাটুন এপিবিএন, কয়েক প্লাটুন ডিএমপির রিজার্ভ পুলিশ, এক প্লাটুন এটিইউ আসে মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে।

শিক্ষকরা এ সময় শিক্ষার্থীদের দূরে সরিয়ে দেন এবং বের হয়ে যেতে বলেন। বাড়তি পুলিশের উপস্থিতির মধ্যে বিক্ষোভ থামিয়ে শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়লেও কিছুক্ষণ পর তারা স্কুলের বাইরে গোল চত্বরে অবস্থান নেন।

এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা ৫ নম্বর ভবনের কাচ ভাংচুর শুরু করলে উপদেষ্টারা ভবনটির নিচ তলার সম্মেলনকক্ষ ছেড়ে উপরের কোনো একটা তলায় অবস্থান নেন। পরে তৃতীয় তলা থেকে তাদের নেমে আসতে দেখা যায়।

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তারা পতাকাবিহীন সরকারি গাড়িতে চেপে সামনে পেছনে কয়েকশ পুলিশের পাহারা নিয়ে স্কুল ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্কুলের বাইরে গোল চত্বরে কয়েকশ শিক্ষার্থীর অবস্থানের কারণে ১৫ মিনিট পর তারা আবার ভেতরে ফিরে যান।

শিক্ষার্থীরা গোল চত্বরেই সড়ক অবরোধ করে বসে তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে শ্লোগান দিচ্ছিলেন। তাদের পেছনে সতর্ক অবস্থান নিয়ে ছিলেন পুলিশের সদস্যরা।

সন্ধ্যার পর পুলিশ গোলচত্বর থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে দুই উপদেষ্টার ফেরার সুযোগ তৈরি হয়।

শিক্ষার্থীদের ছয় দাবি হল-

>> নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করা

>> আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করা।

>> শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জনসম্মুখে সেনা সদস্যদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া।

>> নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

>> বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো উড়োজাহাজ বাতিল করে আধুনিক উড়োযান চালু করা।

>> বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে আরও ‘মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা’ চালু করা।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল