নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামীকাল শুক্রবার (২৫ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি অনলাইন মিটিং হবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এসব কথা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমানোর বিষয়ে দেশটির কাছে লেখা চিঠির জবাব এবং দেশটিতে আবার সফরের আমন্ত্রণ পেতে শেষ মুহূর্তেও অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে দুই দফা আলোচনা হলেও এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকরের কথা জানান। নতুন করে এ শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে গড় শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা সর্বশেষ অগ্রগতির কতদূর জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা গত পরশুদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রীকে আমাদের করণীয় সম্পর্কে একটি পত্র দিয়েছি। আমরা জবাবের অপেক্ষায় আছি। আমরা আমন্ত্রণের অপেক্ষায়ও আছি। জবাব এবং আমন্ত্রণ পেলে আমাদের নেগোসিয়েশন টিমসহ সবাই একত্রে মিলে আমরা যাব।'
আগামী ১ আগস্ট থেকে শুল্ক কার্যকর হবে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, 'আমাদের জন্য যেমন প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমাদের কর্মকাণ্ডে কোনো স্থবিরতা নেই। কর্মকাণ্ড যথেষ্ট গতিশীলতার সঙ্গে এগোচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান সঠিকভাবে তুলে ধরেছি। সক্ষমতার ভিত্তিতে আমাদের যা করণীয়, সেই করণীয় তুলে ধরার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখন উনাদের [যুক্তরাষ্ট্রের] আমন্ত্রণের অপেক্ষায় আছি। আমন্ত্রণ পেলেই চলে যাব।'
শুল্কহার নিয়ে দর কষাকষির বিষয়ে বাংলাদেশ কী প্রত্যাশা করছে এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা প্রত্যাশা করছি ভালো কোনো কিছু। ভালো কোনো কিছু করার ক্ষেত্রে যা করণীয় সেগুলোই আমরা করছি।'
সর্বশেষ যে মিটিং করেছেন সেখানে কোনো ইঙ্গিত পেয়েছিলেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে বশিরউদ্দীন বলেন, 'আমাদের কাছে মনে হয়েছে আমাদের জন্য হয়তো ভালো কিছু হবে, ইনশাল্লাহ্।'
বাংলাদেশি পণ্যে বাড়তি শুল্ক কমানোর দর কষাকষির জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, 'এটি ব্যবসায়ীদের এখতিয়ার। সরকার কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। আপনাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল ইমারজেন্সি বিনিময়ে কাজটি করছে। এখানে যে কাঠামোর ওপর ঘটনাটা ঘটছে, এ কাঠামোতে লবিস্টদের করার কোনো কিছু আছে কি না আমি ঠিক জানি না।'
তিনি বলেন, 'আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এ পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। পরিবর্তনগুলোতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো আইনি প্রক্রিয়া আছে। এ আইনি প্রক্রিয়াগুলো একজন লবিস্টের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় বলে আমার ধারণা। আমরা সরকারের প্রায় সব মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছি। গত ১৫ দিন ধরে দিন-রাত কাজ হয়েছে এটির ওপর। আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি, আশা করি ওনাদের আমন্ত্রণ পেলে চলে যাব।'
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কহার কার্যকরের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে দর কষাকষি বা আলোচনার আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ কতটা আশাবাদী জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, 'আমি আপনার [সাংবাদিকদের ইঙ্গিত করে] মতো একই বিষয়ে উৎসুক ও আগ্রহী। আপনি যতটুকু আগ্রহী আমিও ততটুকুই আগ্রহী।'
তিনি বলেন, 'আমরা হয়তো একটা অনলাইন মিটিংয়ের সিডিউল পাচ্ছি আজ-কালকের মধ্যে। বিষয়গুলো গতিশীলভাবে এগোচ্ছে বলেই চিঠির ওপর ভিত্তি করে তারা একটি অনলাইন মিটিংয়ের সিডিউল দিয়েছে। অনলাইন মিটিংয়ের ভিত্তিতে আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড করব। অনলাইন মিটিং সম্ভবত কাল [শুক্রবার] হবে।'
শুল্ক ইস্যুতে ১ আগস্টের পরবর্তী সময়েও কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হবে জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, 'অবশ্যই হবে, ইনশাল্লাহ্ হবে।'
এমআই