বাকৃবি প্রতিনিধি:
প্রাণিসম্পদ খাতের সমতা ও কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের শিক্ষার্থীরা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদেশ ভ্রমণে থাকায় উপাচার্যের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জি. এম. মুজিবর রহমান।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা প্রাণি চিকিৎসা ও প্রাণি উৎপাদন, দুই ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কম্বাইন্ড (বিএসসি ইন ভেট সাইন্স এন্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি) ডিগ্রি চালুর দাবি জানান।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে অনুষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেট, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে থামে। পরে উপাচার্য বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।
এরপর আবার মিছিলটি ভেটেরিনারি অনুষদের করিডর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় পশুপালন অনুষদের সামনে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। পরে একটি স্মারক লিপি অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন কাছে প্রদান করা হয়।
স্মারক লিপিতে শিক্ষার্থীদের দাবি, দেশে বর্তমানে ভেটেরিনারি সায়েন্স ও এনিম্যাল হাজবেন্ড্রিকে একীভূত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে একটি মাত্র ডিগ্রিতে প্রাণি চিকিৎসা ও উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকায় গ্র্যাজুয়েটরা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সবধরনের পদের জন্য আবেদন করতে পারছেন। অথচ বাকৃবিতে এখনো দুটি অনুষদ পৃথকভাবে থাকায় অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অবহেলিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন ২০১৯ অনুযায়ী কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের প্র্যাকটিসের স্বীকৃতি থাকলেও অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের ক্ষেত্র একেবারেই সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেসরকারি খাতেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র ডিভিএম বা কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
স্মারকলিপিতে তারা বলেন, “বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি, ডেইরি, নিউট্রিশন ও জেনেটিক্স ডিপার্টমেন্টের লেকচারার পদে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি বাদ দিয়ে ডিভিএম ও কম্বাইন্ডদের উল্লেখ্য করে সার্কুলার দেয়া হচ্ছে। অথচ উপরোক্ত সাবজেক্টগুলো এনিম্যাল হাজবেন্ড্রির কোর সাবজেক্ট। এমনকি ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইনেও ভেটেরিনারির সংজ্ঞাতে উৎপাদন সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় প্রবেশ করিয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি গ্র্যাজুয়েটদের কর্মপরিধি একদম সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা শিক্ষা নিচ্ছি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্বপূর্ণ কোর বিষয়ের ওপর, অথচ বাস্তবে আমাদের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমাদের সিনিয়ররাও চরম হতাশা ও পেশাগত অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।”
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, "প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করতে হলে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্সের সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করা সময়ের দাবি।"
স্মারক লিপি গ্রহণের বিষয়ে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করেছি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট যে অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি ফ্যাকাল্টি টা ৬৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং ফ্যাকাল্টিটা কম্বাইন্ড করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা একমত না। উপাচার্য স্যার বিদেশ থেকে আসলে আমাদের ডাকলে আমরা সেভাবে আলোচনা করবো।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জি. এম. মুজিবর রহমান বলেন, " আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির স্মারক লিপিটি হাতে পেয়েছি। এখানে দুই অনুষদের সমঝোতার বিষয় রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছুটি শেষে দেশে এসে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। "
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার থেকে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। আজ দ্বিতীয় দিনেও তারা ক্লাস বর্জন করে কর্মসূচি পালন করেন।
এমআই