ইলিয়াস হোসেন : কাজের মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরতে চাই বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তরুণ নারী উদ্যোক্তা সাদিয়া ইসলাম কেয়া। সময় জার্নালের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিজের এ স্বপ্ন তুলে ধরেন রাজধানীর মিরপুরের এই প্রত্যয়ী মেয়ে। চলুন সাদিয়ার কথাগুলো তাঁর ভাষাতেই পড়ি।
আস-সালামু-আলাইকুম। আমি সাদিয়া ইসলাম কেয়া।
ব্যবসায়ীক পেজের নাম : Rangabati
আমি মূলত: একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আমার পড়ালেখার খরচ আমাকেই বহন করতে হয়। যেহেতু আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা একটি মেয়ে। পড়ালেখার খরচ জোগাতে অনেক সমস্যার মুখে পড়েছি। নিজস্ব প্রচেষ্টায় সবকিছুই পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেছি। তখন থেকে আমি ছাত্র-ছাত্রী পড়াই, টিউশনি করি। কিন্তু দিন শেষে খুব একটা মানসিক ভালো লাগা কাজ করে নাই। মাঝে ১ বছরের মগাতেতো চাকুরিও করছি। সাথে টিউশনি চালিয়ে গেছি।
পরে ভেবে চিন্তে নিলাম যে, উদ্যোক্তা হব। কিন্তু আমাদের এই সমাজে মেয়েদেরকে খুব একটা উৎসাহ দেয়া হয় না। তাদের চিন্তা ভাবনায় মেয়েরা শুধু বাসায় থাকবে। বাসায় সংসার দেখবে। সাথে ছেলে-মেয়ে লালন-পালন করবে- এইগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু আমি কলেজে পড়াশুনা অবস্থায় ভাবতাম যে নিজে কিছু করবো, নিজের জন্য কিছু করবো। আমাদের এই দেশে মেয়েরা জন্মের পর তার পৈত্রিক পরিচয়ে বড় হয়, তারপর বিয়ের পর হাসব্যান্ডের পরিচয়ে।
আমি চাই, আমার জন্য কিছু করতে। নিজেকে নিজের কাজের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরতে। যাতে করে আমাদের এই সমাজও মানতে পারে যে মেয়েরাও নিজেদের মেধা শক্তি দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাতে পারে। মেয়েরা দুর্বল না৷। কঠোর পরিশ্রম আর মনে সৎ নিষ্ঠা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
যাত্রা শুরুর গল্প : এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছিলেন, স্বপ্ন সেটা নয়- যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে। স্বপ্ন সেটাই- যেটা পূরনের প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।
আমার যাত্রা শুরুটা বলতে গেলে, অনেকগুলো কথা বলতে হচ্ছে। ভাবলাম যে, ভালো কিছু করা যায় কিভাবে?
যারা ভাবে তারা ভিড়ের মধ্যেও একা থাকে।
কই থেকে শুরু করবো? একজন মানুষের ভাবনাই তাকে তৈরী করে।
তখন মাথায় আসলো ব্যাপারটা। আর তখনি কাজগুলো গোছায়ে আনতে শুরু করি।
অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন যারা :
অনুপ্রেরণায় বলতে গেলে আমার মা। কারণটা হল, মা আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু এবং আমাকে অনেক বেশি সাপোর্ট করেন। সব ধরনের সহযোগিতা করেন। পেইজটা শুধু আমার একাই দেখছি না। এর জড়িত আছেন আমার মা। আমার আদরের ছোট বোন (ফারিহা ইসলাম রাইসা)। আমরা তিনজন মিলেই সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি উদ্যোগকে। .
নেপলিয়ন হিল বলেছিলেন-
নিজের লক্ষ্য ও স্বপ্নকে আপনার আত্মার সন্তান হিসেবে লালন করুন। এগুলোই আপনার চূড়ান্ত সাফল্যের নকশা হবে।
বর্তমান অবস্থা : বর্তমান অবস্থা হল গত ২ বছর যাবৎ বিজনেসটা করছি। অনলাইনে ১ বছরের বেশি। আল্লাহ রহমতে আমার ছোট একটা শপও আছে মিরপুরে। সব মিলিয়ে বলবো- আলহামদুলিল্লাহ ভালোই যাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তো অনেক কিছুই। এর মধ্যে প্রথমটা হলো একটা বুটিকস হাউস দিতে চাই। দ্বিতীয়ত: নিজের একটা রেসটুরেন্ট দিতে চাই। যেখানে আমার মতো মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে চাই এবং মেয়েদের সেইখানে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কঠিন পরিশ্রমের কোনো শর্ট কাট পথ নেই। এ ছাড়া আরও কিছু স্বপ্ন আছে- যেগুলা সময়ের সাথে সাথে গড়ে তুলবো ইন-শা-আল্লাহ।
কেন নারী উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে জেগেছিল?
নারী উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে জেগেছিল অনেকগুলা কারনেই। ইচ্ছাই মানুষের শক্তি, আর এই ইচ্ছে শক্তি আমাকে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়েছে।
"সাফল্যের আগুন একা একা জ্বলে না। এটা তোমাকে নিজ হাতে জ্বালাতে হবে” – আর্নল্ড গ্লাসগো (আমেরিকান সফল উদ্যোক্তা)
সময় জার্নাল/ইএইচ