বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ফোনে বিরক্ত করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও লাখ টাকা জরিমানা

মঙ্গলবার, জুলাই ১৩, ২০২১
ফোনে বিরক্ত করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও লাখ টাকা জরিমানা

সময় জার্নাল রিপোর্ট : দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হটলাইন বা ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে অকারণে কল দিয়ে বিরক্ত করলে এখন থেকে জরিমানা ও কারাদণ্ড দিতে পারবে মোবাইল কোর্ট। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭০ ধারাটি মোবাইল কোর্ট আইনের তফশিলভুক্ত করায় এখন থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দিতে পারবেন। এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তর একটি প্রস্তাব পাঠানোর পর তা যাচাই-বাচাই করে সম্মতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ শাখায় পাঠানো হয়। এই শাখা থেকে ভেটিং শেষে রোববার এসআরও নম্বর দিয়ে নথিটি পুনরায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বুধবার (১৪ জুলাই) বা আগামীকাল (১৫ জুলাই) নথিটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার কথা রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (আইন-২) ফৌজিয়া খান বলেন, ‘আমরা যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। করোনা সংক্রমণজনিত কারণে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। শিগগিরই এটা হয়ে যাবে।’ সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর ফোনে বিরক্তিকর কল ঠেকাতে এবং বিরক্তকারীকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাবনা পাঠায়।

ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়, ‘২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু করে। নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে এই ৯৯৯-এর। যার উদ্দেশ্য মূলত নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা, দ্রুততম সময়ে জরুরি সেবা দিয়ে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করাসহ আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে পুলিশি সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয় করে জরুরি সেবা নিশ্চিত করা।’

লিখিত প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংকটাপন্ন মানুষকে সহায়তা, দুর্ঘটনা বা অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধের শিকার কোনো ব্যক্তি ও সম্পদ উদ্ধার, দুর্ঘটনায় পতিত মানুষকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা এবং জান-মাল উদ্ধারসহ দ্রুততম সময়ে দুর্গতদের হাসপাতালে পাঠানো ইত্যাদি জরুরি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নীতিমালা তৈরি করা হয়। তবে এই সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অপ্রয়োজনীয় কল বা ফলস কল বা বিরক্তিকর কল। ওই নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২.১২-তে এ ধরনের কলকে প্রাঙ্ক অথবা ক্রাঙ্ক কল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং অনুচ্ছেদ ১২.০৪-তে ‘বিরক্তিকর (প্রাঙ্ক বা ক্রাঙ্ক) কলগুলো প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ মর্মে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।’

পুলিশের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০২১ রয়েছে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ফোনে বিরক্তি করা বা অসুবিধার সৃষ্টি করলে এই আইনের ৭০(১) ধারা অনুযায়ী দণ্ডের বিধান রয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-সহ নাগরিক সেবা প্রদানকারী অন্যান্য সেবার হটলাইন নম্বরে বিরক্তিকর বা অপ্রয়োজনীয় কলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের প্রকৃত সেবা প্রাপ্তিতে বিঘ্ন ঘটছে। বর্ণিত আইনে নিয়মিত মামলা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ ছাড়া বিরক্তিকর কল প্রতিরোধে টেলিযোগাযোগ আইনের ৭০ ধারাটি মোবাইল কোর্ট আইনের তফশিলে সন্নিবেশিত নেই। তাই অহেতুক ফ্রাঙ্ক অথবা ক্রাঙ্ক কল করে বিরক্ত করা বা অপ্রয়োজনে কল করার দণ্ড আরোপের ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ আইনের ৭০ ধারাটি মোবাইল কোর্ট আইনে তফশিলভুক্ত করা প্রয়োজন।’

প্রসঙ্গত, টেলিযোগাযোগ আইনের ৭০(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত যদি অন্য কোন ব্যক্তির নিকট এইরূপে বারবার টেলিফোন করেন যে, উহা উক্ত অন্য ব্যক্তির জন্য বিরক্তিকর হয় বা অসুবিধার সৃষ্টি করে, তাহা হইলে এইরূপে টেলিফোন করা একটি অপরাধ হইবে এবং উহার জন্য দোষী ব্যক্তি অনধিক ১ (এক) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে এবং উহা অনাদায়ে অনধিক ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ‘৯৯৯ ও ৩৩৩-সহ সরকারের জরুরি সেবা-সংক্রান্ত বিভিন্ন হটলাইনে যত কল আসে, এর প্রায় ৭০ শতাংশ বা তারও বেশি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। এসব ভুয়া কল প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ভুয়া কলের কারণে প্রকৃত বা প্রত্যাশীদের সেবা নির্বিঘ্ন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে অযথা কারণে ফোন করে বিরক্ত করে থাকেন। এসব বিষয় সামনে রেখে টেলিযোগাযোগ আইনের ৭০ ধারাটি মোবাইল কোর্ট আইনের তফশিলভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে অতিরিক্ত দায়রা জজ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, মেট্রোপলিটন মেজিস্ট্রেটসহ যারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত, তারা সবাই এসব অভিযোগের বিচার করতে পারবেন। দ্রুততার সঙ্গে সাজা নিশ্চিত করে এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সহজ হবে। এর ফলে হটলাইন ও মোবাইল ফোনে বিরক্ত করার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।’

সময় জার্নাল/আরইউ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল